হুগলী নদীর তীরে বাঁশবেড়িয়া অবস্থিত। যদি কলকাতা থেকে আসতে হয় তাহলে হুগলী ঘাট রেলওয়ে স্টেশন এ নামলে হবে। তাছাড়া নৈহাটী থেকে নৌকা করে অথবা কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বাঁশবেড়িয়া আসতে হবে। এইখানে আছে ১২ দশকের এক রাজ্ পরিবার। আছে ঐতিহ্য ময় মন্দির , তোরণ , পরিখা - যা সব বেশির ভাগ ই ১৬ থেকে ১৭ এর দশকে তৈরী। এইখানে এখনো কোনোভাবে এখনো বেঁচে আছে রাজ্ পরিবারের সদস্যরা - রাজার রাজ্যও আজ হয়তো নেই কিন্তু আছে ফেলে যাওয়া ইতিহাস। আছে অতীত কে আর এক ঝলক দেখে নেওয়ার সুযোগ। এছাড়াও রয়েছে ২০০ বছরের ও বেশি সময় ধরে দূর্গা পূজার ইতিহাস। হয়তো সেই গৌরব আর নেই তবুও যা পড়ে আছে তা দর্শন পাওয়া পুণ্যই হবে বলে আমার মনে হয়। চলুন আর একবার ইতিহাস কে মন্থন করে আসি। আরেকবার দেখে আসি ফেলে যাওয়া রাজাদের সেই স্মৃতি কে।
কাহিনী অনেক বড়। তবুও সংক্ষিপ্তত আকারে বলার চেষ্টা করলাম। হয়তো অনেক কিছু বলা হবে না। তাই ক্ষমা চাইছি। কাহিনীর শুরু রাজা নৃসিংহদেব থেকে। আজকের এই বাঁশবেড়িয়া মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হলেন রাজা নৃসিংহ দেব রায়। কিন্তু তার আগেও অনেক ইতিহাস আছে যা হয়তো অনেকের অজানা। তাই জানতে হলে জানার শেষ নেই। পিছনে ফিরে গিয়ে অনেক জানতে হবে। বাংলার ইতিহাস এ যেসব রাজবংশ এর ইতিহাস আছে তার মধ্যে বাঁশবন বা বংশবটি বা বর্তমানে বাঁশবেড়িয়া এর রাজবংশ অন্যতম। তাই সংক্ষিপ্ত আকারে বলা একান্ত প্রয়োজন।
ইতিহাসের পাতায় পাওয়া এই বংশের আদি পুরুষের নাম হলো দেবদত্ত। তার বংশ থেকেই বাঁশবেড়িয়া এর মহাতাপস নৃসিংহ দেব এর বংশের উতপত্তি। এই দেবদত্তের অধস্তন দশম তম পুরুষ ছিলেন কবিদ্যুত্তা যিনি রাজা লক্ষন সেন এর কাছে থেকে "খান" উপাধি পান। তাঁর ষষ্ঠতম প্রজন্মের পুত্র হলেন সহস্রাক্ষ। তাঁর নাতি হলেন জয়ানন্দ। তিনি মহাপ্রতাপশালী রাজা ছিলেন। তাঁর পাঁচটি পুত্রের মধ্যে ১ টি পুত্র রাঘবেন্দ্র ছাড়া বাকিদের কেহ সন্তান ছিলো না। এবং প্রত্যেকের অকালপ্রয়াণ ঘটে। যার ফলে রাঘবেন্দ্র সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি সম্রাট শাহজাহান এর কাছে থেকে তিনি প্রথমে "চৌধুরী " ও পরের বছর "মজুমদার" উপাধি লাভ করেন। তার সাথে ২১ টি পরগনার জমিদারি ও লাভ করেন। সেগুলি হলো - এরশা , হলদা , মামদানীপুর ইত্যাদি সহ প্রায় ৭০০ বর্গ মাইল এলাকাঃ। এইরূপে বংশ পরম্পরায় সম্পত্তির দেখভাল হতে থাকে। এই এই রাঘব রাই এর পুত্র হলেন রামেশ্বর দেব যিনি বর্তমান হংসেশ্বরী মন্দিরের পাশে যে অনন্ত বাসুদেব মন্দির টি আছে তার প্রঠিস্টাথা। এই অতুলনীয় কারুকার্যও সম্মনিত এই মন্দিরটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ১৬০১ শকাব্দ বা ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দ। মন্দিরের পাদদেশে আজ চোখে পড়বে সেই লেখা( সংস্কৃতে ) যার অর্থ - মহি অর্থাৎ ১ , ব্যোম অর্থাৎ ০ , অঙ্গ অর্থাৎ ৬ , সীতাংশু অর্থাৎ ১ - এই অঙ্ক গুলি কে এক করলে পাওয়া যাবে - ১৬০১ শকাব্দ।
এই নৃসিংহ দেব মহাশয় ই হংসেশ্বরী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শুরু করেন। তিনি মহৎ লোক ছিলেন। তন্ত্র সাধনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিলো ও সেই মহৎ উদ্দেশে তিনি কাশি , বারানসি প্রমুখ স্থান ভ্রমণ করেন। একটি মত অনুযায়ী মন্দিরের নির্মাণ কাল শুরু করার সময় ছিলো ১৮০১ থেকে ১৮১৪ এর কোনো এক সময়। বারাণসী থেকে ফিরে তিনি স্বপ্নে দেখতে পান মা তাকে আদেশ দিচ্ছেন একটি মন্দির নির্মাণ করতে তাই নৃসিংহ মহাশয় মন্দিরের কাজ শুরু করেন। সম্পূর্ণ ভাবে তন্ত্র বিদ্যা কে প্রয়োগ করে মন্দির টি নির্মাণ করা হয়েছে। এইবার সেই কথায় আসা যাক।
তন্ত্রের নিবৃত্তি মার্গের সাধনা কে বলা হয় " ষট্চক্রভেদ " সাধনা। এই ষট্চক্রভেদকে অনুসরণ করে মন্দির টি নির্মাণ করা হয়েছে। তন্ত্র মত্ অনুযায়ী , আমাদের দেহ ছয় টি চক্রে বিভক্ত। এই চক্র গুলো যথাক্রমে - মূলাধার , স্বধিষ্ঠান , মনিপুর , অনাহত , বিশুদ্ধ , আজ্ঞা ও সহস্রার। হংসেশ্বরীমন্দির টি তৈরী হয়েছে এই ষট্চক্র কে অনুসরণ করে। তন্ত্র মতে এই ষট্চক্র ই হলো একমাত্র রাস্তা যা কুলুকুন্ডলিনী ক্ষমতা অর্জন করতে সমর্থ করে। মন্দির টি দেখলেই তা বোঝা যাবে।মন্দিরের মধ্যে মায়ের যে মূর্তিটি আছে সেটি নিম কাঠের তৈরী। কথিত আছে যে তিনি নাকি কাশি থেকে আর পথে ৮/৬ মাপের একটি বৃহৎ নিম গাছের গুড়ি নিয়ে আসেন - যা দিয়ে পরবর্তী কালে হংসেশ্বরীমন্দিরের মূর্তিটি তৈরী হয়। এই ১৮০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে মন্দিরের নকশার কাজ শুরু করেন নৃসিংহ মহাশয়। তিনি ভালো করে জানতে যে তিনি এই মন্দিরের কাজ এর শেষ দেখে যেতে পারবেন না। তাই নৃসিংহ মহাশয় ব্যাস্ত ছিলেন তার পরবর্তী প্ৰজন্ম এর হাতে সব কিছু বুঝিয়ে দিতে। অবশেষে প্রায় সতেরো বছর পরে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে নৃসিংহ দেব মহাশয় এর মহাপ্রয়াণ ঘটে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ হাতে তুলে নেন রানী শঙ্করী। যতদূর জানা যায় ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। মন্দিরের বাইরে যে প্রতিষ্ঠা ফলক টি আছে সেটি থেকে জানতে পারি - ১৭৩৬ শকাব্দ বা ১৭৩৬ + ৭৮ = ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ। বর্তমানে Archaeological Survey of India এই মন্দির টি দেখভালের দায়িত্বে আছে। মন্দিরটি তে প্রধান ৫( মোট ১৩টি আসলে) টি চূড়া আছে ( যেটি কে বলা হয়ে থাকে আমাদের যে ৫ টি প্রধান নাড়ি তার অনুকরণে , সেইগুলি হলো - ইরা , পিংলা , সুষুম্না , বজ্রাক্ষী , চিত্রাণি। ) মন্দিরের উচ্চতা বর্তমান যুগের ৫-৬ তলা বাড়ির সমান হবে। মন্দিরের সামনে খুব এ সুন্দর মনোরম পরিবেশ আছে। দূর থেকে হংসেশ্বরী মন্দিরের চূড়াটি দেখা যায় । হংসেশ্বরীমন্দির ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির টি ঠিক পাশাপাশি অবস্থান করছে। মন্দিরের সামনে একটি ফোয়ারা আছে। আমার খুব সৌভাগ্য হয়েছিলো মন্দিরের পুরোহিতের সাথে কথা বলার। তার কাছে থেকে তথ্য জানতে পেরেছিলাম। মন্দিরের সামনের ঝর্ণা টি আসলে কুলুকুন্ডলিনী এর প্রবাহ কে বর্ণনা করে। তিনি বললেন একদিন উপরে শিবঘর ধোবার পরে কয়েক বালতি জল ঢালার পরে তিনি আসল ঘটনা টি বুজতে পারেন। ওই বালতি জল উপরের একটি জলপাত্রে ঢালার পরে সেই জল ফোয়ারা তে এসে পরে। যা আসলে কুলুকুন্ডলিনী পদ্ধতি কে বর্ণনা করে।
নৃসিংহ মহাশয় এর পরে তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ রানী শঙ্করী শুধু সম্পূর্ণ করেছিলেন তাই নয় , তার সাথে ও তার পরে বহু অসম্পূর্ণ কাজ ও তিনি পূর্ণ করেন। নৃসিংহ মহাশয়ের একটি দত্তক পুত্র ছিলো যার নাম কৈলাশ দেব। কিন্তু তার জমিদারি তে ভালো মনোযোগ না থাকায় ও আরো বিবিধ কারণে রানী শঙ্করী কেই জমিদার পরিবারের দীর্ঘ দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিলো। রানী শঙ্করী এর মৃত্যুর পরে তার বংশধর রা আজ ও সেখানে বসবাস করছেন এখনকার বংশধরেরা। এই খানে যে মন্দির আছে তাতে বংশ পরম্পরায় পুরোহিত নিয়িমিত পুজো করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন এইখানে হয় সন্ধ্যা আরতি যা খুব এ সুন্দর। সকালে অনুমতি মেলে ভোগ এর ও। মন্দিরে নিম কাঠের নীলাভ রঙের আজ ও যেন নৃসিংহ দেবের স্মৃতি কে বহন করে। এই রাজপরিবারের অনেক জিনিস আজ ও কলকাতার মিউজিয়াম এ আছে। দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে আজ ও এই মন্দিরে হয়ে চলেছে পুজো। শুধু দূর্গা পূজা নয় , আরো অনেক উৎসব এইখানে হয়ে থাকে। বস্তুত মন্দির তৈরির আগে থেকে এই পরিবারে পূজার পচল ছিলো। তাই বলতে পারি রি রাজপূজার দূর্গা পূজা ২০০ বছর নয় ৫০০ বছরের ও পুরোনো। তাহলে একদিন আসুন , ঘুরে যান।
নিচে কিছু ছবি ও তাদের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো -
চিত্র - এটিও হলো হংসেশ্বরী মন্দির। সামনে থেকে তোলা চিত্র।
চিত্র - নৃসিংহ মহাশয়ের দ্বারা আনীত নিম কাঠের তৈরী মাতৃ মূর্তি।
চিত্র - নৃসিংহ মহাশয়ের তৈরী পুরাতন বাটী - যা আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে।
চিত্র - মন্দিরের বিপরীতে জমিদার বাড়ি , যেইখানে এখনো পুরোনো বংশধরেরা থাকেন।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখি -
হংসেশ্বরী = হংস + ঈশ্বরী। উপনিষদ এ হংস শব্দের অর্থ হলো সূর্য বা জ্ঞান। এটি কোনো একটি বিষয়ে জ্ঞান নয়। এটি হলো নিরপেক্ষ জ্ঞান। এটি হলো পূর্ণ জ্ঞান। এই জ্ঞান লেভার চেষ্টাই সাধনা। এটি কেই বলা হয় সিদ্ধি। এটি হলো শুধু একটি পথ। সব যদি যেমন সাগরে এসে মিলিত হয় তেমনি হংসবিদ্যা সাধনার বা জ্ঞানলাভের বা সিদ্ধি এর একটি উপায়। ঋকবেদে এই হংস বিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে।
এই মন্দির সম্পর্কে অনেক তথ্য আরো জেনে রাখা ভালো -
এই নৃসিংহ দেব মহাশয় ই হংসেশ্বরী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শুরু করেন। তিনি মহৎ লোক ছিলেন। তন্ত্র সাধনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিলো ও সেই মহৎ উদ্দেশে তিনি কাশি , বারানসি প্রমুখ স্থান ভ্রমণ করেন। একটি মত অনুযায়ী মন্দিরের নির্মাণ কাল শুরু করার সময় ছিলো ১৮০১ থেকে ১৮১৪ এর কোনো এক সময়। বারাণসী থেকে ফিরে তিনি স্বপ্নে দেখতে পান মা তাকে আদেশ দিচ্ছেন একটি মন্দির নির্মাণ করতে তাই নৃসিংহ মহাশয় মন্দিরের কাজ শুরু করেন। সম্পূর্ণ ভাবে তন্ত্র বিদ্যা কে প্রয়োগ করে মন্দির টি নির্মাণ করা হয়েছে। এইবার সেই কথায় আসা যাক।
তন্ত্রের নিবৃত্তি মার্গের সাধনা কে বলা হয় " ষট্চক্রভেদ " সাধনা। এই ষট্চক্রভেদকে অনুসরণ করে মন্দির টি নির্মাণ করা হয়েছে। তন্ত্র মত্ অনুযায়ী , আমাদের দেহ ছয় টি চক্রে বিভক্ত। এই চক্র গুলো যথাক্রমে - মূলাধার , স্বধিষ্ঠান , মনিপুর , অনাহত , বিশুদ্ধ , আজ্ঞা ও সহস্রার। হংসেশ্বরীমন্দির টি তৈরী হয়েছে এই ষট্চক্র কে অনুসরণ করে। তন্ত্র মতে এই ষট্চক্র ই হলো একমাত্র রাস্তা যা কুলুকুন্ডলিনী ক্ষমতা অর্জন করতে সমর্থ করে। মন্দির টি দেখলেই তা বোঝা যাবে।মন্দিরের মধ্যে মায়ের যে মূর্তিটি আছে সেটি নিম কাঠের তৈরী। কথিত আছে যে তিনি নাকি কাশি থেকে আর পথে ৮/৬ মাপের একটি বৃহৎ নিম গাছের গুড়ি নিয়ে আসেন - যা দিয়ে পরবর্তী কালে হংসেশ্বরীমন্দিরের মূর্তিটি তৈরী হয়। এই ১৮০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে মন্দিরের নকশার কাজ শুরু করেন নৃসিংহ মহাশয়। তিনি ভালো করে জানতে যে তিনি এই মন্দিরের কাজ এর শেষ দেখে যেতে পারবেন না। তাই নৃসিংহ মহাশয় ব্যাস্ত ছিলেন তার পরবর্তী প্ৰজন্ম এর হাতে সব কিছু বুঝিয়ে দিতে। অবশেষে প্রায় সতেরো বছর পরে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে নৃসিংহ দেব মহাশয় এর মহাপ্রয়াণ ঘটে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ হাতে তুলে নেন রানী শঙ্করী। যতদূর জানা যায় ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। মন্দিরের বাইরে যে প্রতিষ্ঠা ফলক টি আছে সেটি থেকে জানতে পারি - ১৭৩৬ শকাব্দ বা ১৭৩৬ + ৭৮ = ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ। বর্তমানে Archaeological Survey of India এই মন্দির টি দেখভালের দায়িত্বে আছে। মন্দিরটি তে প্রধান ৫( মোট ১৩টি আসলে) টি চূড়া আছে ( যেটি কে বলা হয়ে থাকে আমাদের যে ৫ টি প্রধান নাড়ি তার অনুকরণে , সেইগুলি হলো - ইরা , পিংলা , সুষুম্না , বজ্রাক্ষী , চিত্রাণি। ) মন্দিরের উচ্চতা বর্তমান যুগের ৫-৬ তলা বাড়ির সমান হবে। মন্দিরের সামনে খুব এ সুন্দর মনোরম পরিবেশ আছে। দূর থেকে হংসেশ্বরী মন্দিরের চূড়াটি দেখা যায় । হংসেশ্বরীমন্দির ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির টি ঠিক পাশাপাশি অবস্থান করছে। মন্দিরের সামনে একটি ফোয়ারা আছে। আমার খুব সৌভাগ্য হয়েছিলো মন্দিরের পুরোহিতের সাথে কথা বলার। তার কাছে থেকে তথ্য জানতে পেরেছিলাম। মন্দিরের সামনের ঝর্ণা টি আসলে কুলুকুন্ডলিনী এর প্রবাহ কে বর্ণনা করে। তিনি বললেন একদিন উপরে শিবঘর ধোবার পরে কয়েক বালতি জল ঢালার পরে তিনি আসল ঘটনা টি বুজতে পারেন। ওই বালতি জল উপরের একটি জলপাত্রে ঢালার পরে সেই জল ফোয়ারা তে এসে পরে। যা আসলে কুলুকুন্ডলিনী পদ্ধতি কে বর্ণনা করে।
নৃসিংহ মহাশয় এর পরে তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ রানী শঙ্করী শুধু সম্পূর্ণ করেছিলেন তাই নয় , তার সাথে ও তার পরে বহু অসম্পূর্ণ কাজ ও তিনি পূর্ণ করেন। নৃসিংহ মহাশয়ের একটি দত্তক পুত্র ছিলো যার নাম কৈলাশ দেব। কিন্তু তার জমিদারি তে ভালো মনোযোগ না থাকায় ও আরো বিবিধ কারণে রানী শঙ্করী কেই জমিদার পরিবারের দীর্ঘ দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিলো। রানী শঙ্করী এর মৃত্যুর পরে তার বংশধর রা আজ ও সেখানে বসবাস করছেন এখনকার বংশধরেরা। এই খানে যে মন্দির আছে তাতে বংশ পরম্পরায় পুরোহিত নিয়িমিত পুজো করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন এইখানে হয় সন্ধ্যা আরতি যা খুব এ সুন্দর। সকালে অনুমতি মেলে ভোগ এর ও। মন্দিরে নিম কাঠের নীলাভ রঙের আজ ও যেন নৃসিংহ দেবের স্মৃতি কে বহন করে। এই রাজপরিবারের অনেক জিনিস আজ ও কলকাতার মিউজিয়াম এ আছে। দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে আজ ও এই মন্দিরে হয়ে চলেছে পুজো। শুধু দূর্গা পূজা নয় , আরো অনেক উৎসব এইখানে হয়ে থাকে। বস্তুত মন্দির তৈরির আগে থেকে এই পরিবারে পূজার পচল ছিলো। তাই বলতে পারি রি রাজপূজার দূর্গা পূজা ২০০ বছর নয় ৫০০ বছরের ও পুরোনো। তাহলে একদিন আসুন , ঘুরে যান।
নিচে কিছু ছবি ও তাদের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো -
চিত্র - নৃসিংহ মহাশয়ের দ্বারা আনীত নিম কাঠের তৈরী মাতৃ মূর্তি।
চিত্র - নৃসিংহ মহাশয়ের তৈরী পুরাতন বাটী - যা আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে।
চিত্র - মন্দিরের বিপরীতে জমিদার বাড়ি , যেইখানে এখনো পুরোনো বংশধরেরা থাকেন।
হংসেশ্বরী = হংস + ঈশ্বরী। উপনিষদ এ হংস শব্দের অর্থ হলো সূর্য বা জ্ঞান। এটি কোনো একটি বিষয়ে জ্ঞান নয়। এটি হলো নিরপেক্ষ জ্ঞান। এটি হলো পূর্ণ জ্ঞান। এই জ্ঞান লেভার চেষ্টাই সাধনা। এটি কেই বলা হয় সিদ্ধি। এটি হলো শুধু একটি পথ। সব যদি যেমন সাগরে এসে মিলিত হয় তেমনি হংসবিদ্যা সাধনার বা জ্ঞানলাভের বা সিদ্ধি এর একটি উপায়। ঋকবেদে এই হংস বিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে।
এই মন্দির সম্পর্কে অনেক তথ্য আরো জেনে রাখা ভালো -
- শোনা যায় ঠাকুর রামকৃষ্ণও এই মন্দিরে এসেছিলেন।
- স্বামী বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী রূপে আত্মপ্রকাশের আগে এই মন্দিরে এই মন্দিরে এসেছিলেন। শুধু নয় - কয়েকবার। তিনি নাকি এসে মন্দির প্রাঙ্গনে অভিভূত হয়ে গান গাইতেন।
- অনেক সূত্রে জানা যাই রবীন্দ্রনাথ নাকি এই মন্দির প্রাঙ্গনে এসেছিলেন কারণ তার নির্দেশে প্রসিদ্ধ শিল্পী নন্দলাল বসু মহাশয় এইখানে আসেন ও মন্দিরের প্রত্যেকটি টেরাকোটা এর চিত্র্র সংগ্রহ করেন। সেইসাথে নন্দলাল বাবু এরসাথেও আসেন ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
- মন্দির প্রাঙ্গনে মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে বই ও পাওয়া যায়। কিনে পড়তে পারেন অনেক কিছু জানতে পারবেন।



