দু দিনে ঘাটশিলা ভ্রমণ।
গত সপ্তাহে বেরিয়ে পড়লাম পাতি বাইক hero honda super splendor ১২৫ CC নিয়ে।
হালিশহর থেকে ঘাটশিলা ৩০০ km , একদিনেই আসা যায় ( ফেরার দিনে ৩ টা স্পট দেখে একদিনেই এসেছি ) , কিন্তু সকালে বাড়ি থেকে কিছু সমস্যার জন্য বেরাতে দেরি হয়ে যায় , তাই মাঝখানে ঝাড়গ্রামে এক আত্মীয় এর বাড়ি ছিলাম। সেই দিক থেকে বলা যাই ৩ দিনের ঘাটশিলা ট্যুর।
দ্বিতীয়দিনে ঝাড়গ্রাম থেকে প্রথমে জাতীয় সড়ক ৪৯ ( দৈর্ঘ্য ৬৬৮ কিমি এবং খড়গপুর থেকে শুরু করে বিলাশপুর ছত্তীসগড়ে শেষ ) ও পরে জাতীয় সড়ক ১৮ ( গোবিন্দপুর, ধানবাদ
থেকে বালাসোর , ওড়িষ্যা ) তে প্রায় ১১০ কিমি চালিয়ে সকাল ৯ টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম ঘাটশিলা।
শহর কিছুটা ঘুরে চলে গেলাম বুরুডি লেক। লেকের একদিকে আছে কিছু হোটেল। সেখানে দুপুরের খাবার খেলাম। তারপর আরো ২০ কিমি বাইকে পৌঁছিলাম ধারাগিরি জলপ্রপাত। ধারাগিরি পৌঁছনোর রাস্তা বেশ জটিল ও একটু বিভ্রান্তিকর।ধারাগিরি যাবার পথে ইন্টারনেট কাননেশন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় , কাজেই পুরোনো পদ্ধতিতে লোককে জিজ্ঞেসা করে পৌঁছতে হয়। জানিনা ইন্টারনেট কাননেশন ঐখানে নেই নাকি আমাদের ই সমস্যা ছিলো।
বুরুডি লেকের উপরে খুবই সুন্দর খাবার এর দোকান আছে । দেশি মুরগির মাংস দিয়ে ভাত ( পেটচুক্তি ) , ডাল সবজি ইত্যাদি ২০০ টাকা প্লেট। দেশি মুরগির মাংস এর তরকারি অত্যন্ত সুন্দর ছিলো । আমাদের বাড়িতেও দেশি মুরগির মাংস খেয়েছি , কিন্তু এতো সুন্দর কখনো লাগেনি। পুরো খাসি মাংসের মতো লাগছিলো। মনে হয় ঐ দেশি মুরগিগুলির প্রজাতি কলকাতার দেশি মুরগির থেকে আলাদা।
বুরুদি লেক ও ধারাগিরি জলপ্রপাত দেখে চলে আসি ঘাটশিলা রাজবাড়ী। বাংলার রাজবাড়ী গুলির মতো ঐতিহ্য নেই। সত্যি কথা বলতে ওটা আদৌ রাজবাড়ী কিনা সন্দেহ হচ্ছিলো। বেশ নতুন বিল্ডিং। তারপর চলে আসি গৌরীকুঞ্জ( লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বার্ধক্যের বারাণসী ) স্টেশন এর কাছেই । রাতে স্টেশন এর কাছেই একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে নেই।
পরদিন সকালে সাত টার মধ্যে হোটেল ছেড়ে দিই। চললাম রঙ্কিনি মন্দির।
ঘাটশিলা স্টেশন থেকে প্রায় ২০ কিমি। মন্দির দেখতে বেশি সময় লাগবে না। তারপর গেলাম ফুলডুঙরি হিলস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যি উপভোগ করার। মন্দির এর কাছেই আছে Uranium Corporation of India এর তেজস্ক্রিয় বজ্র ফেলার জায়গা। তেজস্ক্রিয়তা যাতে না ছড়ায় তার জন্য চারিদিকে বিশাল প্রাচীর দেওয়া আছে। পথে পড়লো সুবর্ণরেখা নদীও।
এই দুটি পয়েন্ট থেকে চলে এলাম গণেশ কালাচাঁদ এর দোকানে। গণেশ কালাচাঁদ ঘাটশিলা এর বিখ্যাত বিশেষ ধরনের কালাকাধঁ মিষ্টির দোকান। ৫০০/কেজি আর পিস হিসাবে নিলে ১৩ টাকা প্রতি পিস।
এসব দেখে শুরু করলাম ঘরে ফেরার যাত্রা ৩৫০ কিমি যাত্রা পথ , রাত্রি ৭ নাগাদ বাড়ি এসে পৌঁছিলাম।
ঘাটশিলা তে ভালো হোটেলে এর অভাব নেই , যত কড়ি ফেলবেন তত ভালো জিনিস পাবেন। আগে থেকে বুক করার প্রয়োজন নেই। AC হোটেল এর প্রয়োজন এখন পড়বে না। তবে AC হোটেল মিনিমাম ৮০০ - ৯০০ টাকা থেকে শুরু। নন -এসি হোটেল ৫০০ - ৬০০ টাকায় পাবেন ( ডাবল বেড রুম )
তবে ঘাটশিলা ভ্রমণের যদি একটি লিস্ট পেতে চান তবে সেটি নিম্নলিখিত হবে( মানের ক্রম হাসমান গুরুত্ব অনুসারে ) -
১. বুরুডি লেক ও সেখান থেকে ধারাগিরি হিলস
ধারাগিরি জলপ্রপাত
২. রতনের রসমালাই , গণেশ কালাচাঁদ দোকান হয়ে যান গৌরীকুঞ্জ , রামকৃষ্ণ মিশণ ও রঙ্কিনি মন্দির( যাবার পথে সুবর্ণরেখা নদী , ইউরেনিয়াম বজ্র ফেলার খারখানা পাবেন
)
৩. ফুলডুঙরি হিলস ও সূর্য মন্দির
৪. চিত্রকূট হিলস
৩ ও ৪ একদিনে কভার করতে পারবেন।
-কেতকী লেক( অনেক গাড়িওয়ালারা পর্যটক দের জিজ্ঞেসা করছিলো এটা যাবেন কিনা )
-ময়ূরঝর্ণা হাতির করিডর
-কাকরাঝোড়
-সরডিহা ও টাটানগর স্টেশন ও টাটা কারখানা
-Narwa জঙ্গল( এটা ঝাড়খন্ড তবে ঘাটশিলা থেকে বেশ দূরে )
-দুরাসিনী জঙ্গল
চাইলে ব্যাবসার খাতিরে আরো দর্শনীয় স্থান যোগ করা যায়।
যারা ট্রেনে করে ঘুরতে যাবেন তারা ঘাটশিলা স্টেশন এ নেমে দরদাম করে অটো ঠিক করে নেবেন। স্টেশন থেকে sightsing এর সব ব্যবস্থা আছে। একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম ঘাটশিলা স্টেশনের উপরে দোকানের বেশ অভাব। স্টেশন এর বাইরে অনেক দোকান , আমাদের বাংলা স্টেশনের উপর এতো দোকান থাকে যে চলাই যায় না।
ঘাটশিলা যাবার পথে প্রথমে National Highway ১৬ তারপরে National Highway ৪৯ ও শেষে National highway ১৮
এইগুলি সব ভালোভাবে কভার করতে গেলে এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। ....
সব মিলিয়ে ঘাটশিলা ভালোই লাগলো।
ও হ্যা , পেট্রল এর দাম ১০০/লিটার ঝাড়খন্ড এ , ডিজেল ও বাংলার থেকে কম দাম। পারলে গাড়ি ট্যাঙ্ক ফুল করে নেবেন।




No comments:
Post a Comment