Sunday, November 19, 2017

The Family History of the Bansberia Raj and 300 years of Durga Puja is still continuing

হুগলী নদীর তীরে বাঁশবেড়িয়া অবস্থিত। যদি কলকাতা থেকে আসতে হয় তাহলে হুগলী ঘাট রেলওয়ে স্টেশন এ নামলে হবে। তাছাড়া নৈহাটী থেকে নৌকা করে অথবা কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বাঁশবেড়িয়া আসতে হবে। এইখানে আছে ১২ দশকের এক রাজ্ পরিবার। আছে ঐতিহ্য ময় মন্দির , তোরণ , পরিখা - যা সব বেশির ভাগ ই ১৬ থেকে ১৭ এর দশকে তৈরী। এইখানে এখনো কোনোভাবে এখনো বেঁচে আছে রাজ্ পরিবারের সদস্যরা - রাজার রাজ্যও আজ হয়তো নেই কিন্তু আছে ফেলে যাওয়া ইতিহাস। আছে অতীত কে আর এক ঝলক দেখে নেওয়ার সুযোগ। এছাড়াও রয়েছে ২০০ বছরের ও বেশি সময় ধরে দূর্গা পূজার ইতিহাস। হয়তো সেই গৌরব আর নেই তবুও যা পড়ে আছে তা দর্শন পাওয়া পুণ্যই হবে বলে আমার মনে হয়। চলুন আর একবার ইতিহাস কে মন্থন করে আসি। আরেকবার দেখে আসি ফেলে যাওয়া রাজাদের সেই স্মৃতি কে। 

কাহিনী অনেক বড়। তবুও  সংক্ষিপ্তত আকারে বলার চেষ্টা করলাম। হয়তো অনেক কিছু বলা হবে না। তাই ক্ষমা চাইছি। কাহিনীর শুরু  রাজা নৃসিংহদেব থেকে। আজকের এই বাঁশবেড়িয়া মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হলেন রাজা নৃসিংহ দেব রায়। কিন্তু তার আগেও অনেক ইতিহাস আছে যা হয়তো অনেকের অজানা। তাই জানতে হলে জানার শেষ নেই। পিছনে ফিরে গিয়ে অনেক জানতে হবে। বাংলার ইতিহাস এ যেসব রাজবংশ এর ইতিহাস আছে তার মধ্যে বাঁশবন বা বংশবটি বা বর্তমানে বাঁশবেড়িয়া এর রাজবংশ অন্যতম। তাই সংক্ষিপ্ত আকারে বলা একান্ত প্রয়োজন। 

ইতিহাসের পাতায় পাওয়া এই বংশের আদি পুরুষের নাম হলো দেবদত্ত। তার বংশ থেকেই বাঁশবেড়িয়া এর মহাতাপস নৃসিংহ দেব এর বংশের উতপত্তি। এই দেবদত্তের অধস্তন দশম তম পুরুষ ছিলেন কবিদ্যুত্তা যিনি রাজা লক্ষন সেন এর কাছে থেকে "খান" উপাধি পান। তাঁর ষষ্ঠতম প্রজন্মের পুত্র হলেন সহস্রাক্ষ। তাঁর নাতি হলেন জয়ানন্দ। তিনি মহাপ্রতাপশালী রাজা ছিলেন। তাঁর পাঁচটি পুত্রের মধ্যে ১ টি পুত্র রাঘবেন্দ্র ছাড়া বাকিদের কেহ সন্তান ছিলো না। এবং প্রত্যেকের অকালপ্রয়াণ ঘটে। যার ফলে রাঘবেন্দ্র সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি সম্রাট শাহজাহান এর কাছে থেকে তিনি প্রথমে "চৌধুরী " ও পরের বছর "মজুমদার" উপাধি লাভ করেন। তার সাথে ২১ টি পরগনার জমিদারি ও লাভ করেন। সেগুলি হলো - এরশা , হলদা , মামদানীপুর ইত্যাদি সহ প্রায় ৭০০ বর্গ মাইল এলাকাঃ। এইরূপে বংশ পরম্পরায় সম্পত্তির দেখভাল হতে থাকে। এই এই রাঘব রাই এর পুত্র হলেন রামেশ্বর দেব যিনি বর্তমান হংসেশ্বরী মন্দিরের পাশে যে অনন্ত বাসুদেব মন্দির টি আছে তার প্রঠিস্টাথা। এই অতুলনীয় কারুকার্যও সম্মনিত এই মন্দিরটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ১৬০১ শকাব্দ বা ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দ। মন্দিরের পাদদেশে আজ চোখে পড়বে সেই লেখা( সংস্কৃতে ) যার অর্থ - মহি অর্থাৎ ১ , ব্যোম অর্থাৎ ০ , অঙ্গ অর্থাৎ ৬ , সীতাংশু অর্থাৎ ১ - এই অঙ্ক গুলি কে এক করলে পাওয়া যাবে - ১৬০১ শকাব্দ।

এই নৃসিংহ দেব মহাশয় ই হংসেশ্বরী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শুরু করেন। তিনি  মহৎ লোক ছিলেন।  তন্ত্র সাধনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিলো ও সেই মহৎ উদ্দেশে তিনি কাশি , বারানসি প্রমুখ স্থান ভ্রমণ করেন। একটি মত অনুযায়ী মন্দিরের নির্মাণ কাল শুরু করার সময় ছিলো ১৮০১ থেকে ১৮১৪ এর কোনো এক সময়। বারাণসী থেকে ফিরে তিনি স্বপ্নে দেখতে পান মা তাকে আদেশ দিচ্ছেন একটি মন্দির নির্মাণ করতে তাই নৃসিংহ মহাশয় মন্দিরের কাজ শুরু করেন। সম্পূর্ণ ভাবে তন্ত্র বিদ্যা কে প্রয়োগ করে মন্দির টি নির্মাণ করা হয়েছে।  এইবার সেই কথায় আসা যাক।

তন্ত্রের নিবৃত্তি মার্গের সাধনা কে বলা হয় " ষট্চক্রভেদ " সাধনা।  এই ষট্চক্রভেদকে অনুসরণ করে মন্দির টি নির্মাণ করা হয়েছে। তন্ত্র মত্ অনুযায়ী , আমাদের দেহ ছয় টি চক্রে বিভক্ত। এই চক্র গুলো যথাক্রমে - মূলাধার , স্বধিষ্ঠান , মনিপুর , অনাহত , বিশুদ্ধ , আজ্ঞা ও সহস্রার।  হংসেশ্বরীমন্দির টি  তৈরী হয়েছে এই ষট্চক্র কে অনুসরণ করে। তন্ত্র মতে এই ষট্চক্র ই হলো একমাত্র রাস্তা যা কুলুকুন্ডলিনী ক্ষমতা অর্জন করতে সমর্থ করে। মন্দির টি দেখলেই তা বোঝা যাবে।মন্দিরের মধ্যে মায়ের যে মূর্তিটি আছে সেটি নিম কাঠের তৈরী।  কথিত আছে যে তিনি নাকি কাশি থেকে আর পথে ৮/৬ মাপের একটি বৃহৎ নিম গাছের গুড়ি নিয়ে আসেন - যা দিয়ে পরবর্তী কালে হংসেশ্বরীমন্দিরের মূর্তিটি তৈরী হয়। এই ১৮০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে মন্দিরের নকশার কাজ শুরু করেন নৃসিংহ মহাশয়। তিনি ভালো করে জানতে যে তিনি এই মন্দিরের কাজ এর শেষ দেখে যেতে পারবেন না। তাই নৃসিংহ মহাশয় ব্যাস্ত ছিলেন তার পরবর্তী প্ৰজন্ম এর হাতে সব কিছু বুঝিয়ে দিতে। অবশেষে প্রায় সতেরো বছর পরে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে নৃসিংহ দেব মহাশয় এর মহাপ্রয়াণ ঘটে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ হাতে তুলে নেন রানী শঙ্করী। যতদূর জানা যায় ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দিরের কাজ  সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। মন্দিরের বাইরে যে প্রতিষ্ঠা ফলক টি আছে সেটি থেকে জানতে পারি - ১৭৩৬ শকাব্দ বা ১৭৩৬ + ৭৮ = ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ।  বর্তমানে Archaeological Survey of India এই মন্দির টি দেখভালের দায়িত্বে আছে। মন্দিরটি তে প্রধান ৫( মোট ১৩টি আসলে) টি চূড়া আছে ( যেটি কে বলা হয়ে থাকে আমাদের যে ৫ টি প্রধান নাড়ি তার অনুকরণে , সেইগুলি হলো - ইরা , পিংলা , সুষুম্না , বজ্রাক্ষী , চিত্রাণি। ) মন্দিরের উচ্চতা বর্তমান যুগের ৫-৬ তলা বাড়ির সমান হবে। মন্দিরের সামনে খুব এ সুন্দর  মনোরম পরিবেশ আছে। দূর থেকে হংসেশ্বরী মন্দিরের চূড়াটি দেখা যায় । হংসেশ্বরীমন্দির ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির টি ঠিক পাশাপাশি  অবস্থান করছে। মন্দিরের সামনে একটি ফোয়ারা আছে। আমার খুব সৌভাগ্য হয়েছিলো মন্দিরের পুরোহিতের সাথে কথা বলার। তার কাছে থেকে তথ্য জানতে পেরেছিলাম। মন্দিরের সামনের ঝর্ণা টি আসলে কুলুকুন্ডলিনী এর প্রবাহ কে বর্ণনা করে। তিনি  বললেন একদিন উপরে  শিবঘর ধোবার পরে কয়েক বালতি জল ঢালার পরে তিনি আসল ঘটনা টি বুজতে পারেন।  ওই বালতি জল উপরের একটি জলপাত্রে ঢালার পরে সেই জল ফোয়ারা তে এসে পরে।  যা আসলে কুলুকুন্ডলিনী পদ্ধতি কে বর্ণনা করে।

নৃসিংহ মহাশয় এর পরে তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ রানী শঙ্করী শুধু সম্পূর্ণ করেছিলেন তাই নয় , তার সাথে ও তার পরে বহু অসম্পূর্ণ কাজ ও তিনি পূর্ণ করেন। নৃসিংহ মহাশয়ের একটি দত্তক   পুত্র ছিলো যার নাম কৈলাশ দেব। কিন্তু তার জমিদারি তে ভালো মনোযোগ না  থাকায় ও আরো বিবিধ কারণে রানী শঙ্করী কেই জমিদার পরিবারের দীর্ঘ দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিলো। রানী শঙ্করী এর মৃত্যুর পরে তার বংশধর রা আজ ও সেখানে বসবাস করছেন এখনকার বংশধরেরা। এই খানে যে মন্দির আছে তাতে বংশ পরম্পরায় পুরোহিত নিয়িমিত পুজো করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন এইখানে হয় সন্ধ্যা আরতি যা খুব এ সুন্দর।  সকালে অনুমতি মেলে ভোগ এর ও। মন্দিরে নিম কাঠের নীলাভ রঙের আজ ও যেন নৃসিংহ দেবের স্মৃতি কে বহন করে। এই রাজপরিবারের অনেক জিনিস আজ ও কলকাতার  মিউজিয়াম এ আছে। দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে আজ ও এই মন্দিরে হয়ে চলেছে পুজো। শুধু দূর্গা পূজা নয় , আরো অনেক উৎসব এইখানে হয়ে থাকে। বস্তুত মন্দির তৈরির আগে থেকে এই পরিবারে পূজার পচল ছিলো। তাই বলতে পারি রি রাজপূজার দূর্গা পূজা ২০০ বছর নয় ৫০০ বছরের ও  পুরোনো। তাহলে একদিন আসুন ,  ঘুরে যান।


নিচে কিছু ছবি ও তাদের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো -

 

চিত্র - এটিও হলো হংসেশ্বরী মন্দির। সামনে থেকে তোলা চিত্র।


 চিত্র - নৃসিংহ মহাশয়ের দ্বারা আনীত নিম কাঠের তৈরী মাতৃ মূর্তি।
চিত্র - নৃসিংহ মহাশয়ের তৈরী পুরাতন বাটী - যা আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে।
 চিত্র - মন্দিরের বিপরীতে জমিদার বাড়ি , যেইখানে এখনো পুরোনো বংশধরেরা থাকেন।

এই প্রসঙ্গে বলে রাখি -
হংসেশ্বরী  = হংস + ঈশ্বরী। উপনিষদ এ হংস শব্দের অর্থ হলো সূর্য বা জ্ঞান। এটি কোনো একটি বিষয়ে জ্ঞান নয়। এটি হলো নিরপেক্ষ জ্ঞান। এটি হলো পূর্ণ জ্ঞান। এই জ্ঞান  লেভার চেষ্টাই সাধনা। এটি কেই বলা হয় সিদ্ধি। এটি হলো শুধু একটি পথ। সব যদি যেমন সাগরে এসে মিলিত হয় তেমনি হংসবিদ্যা সাধনার বা জ্ঞানলাভের বা সিদ্ধি এর একটি উপায়। ঋকবেদে এই হংস বিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে।

এই মন্দির সম্পর্কে অনেক তথ্য আরো জেনে রাখা ভালো -
  1. শোনা যায় ঠাকুর রামকৃষ্ণও এই মন্দিরে এসেছিলেন। 
  2. স্বামী বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী রূপে আত্মপ্রকাশের আগে এই মন্দিরে এই মন্দিরে এসেছিলেন। শুধু  নয় -  কয়েকবার। তিনি নাকি এসে মন্দির প্রাঙ্গনে অভিভূত হয়ে গান গাইতেন। 
  3. অনেক সূত্রে জানা যাই রবীন্দ্রনাথ নাকি এই মন্দির প্রাঙ্গনে এসেছিলেন কারণ তার নির্দেশে প্রসিদ্ধ শিল্পী নন্দলাল বসু মহাশয় এইখানে আসেন ও মন্দিরের প্রত্যেকটি টেরাকোটা এর চিত্র্র সংগ্রহ করেন।  সেইসাথে নন্দলাল বাবু এরসাথেও আসেন ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। 
  4. মন্দির প্রাঙ্গনে মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে বই ও পাওয়া যায়। কিনে পড়তে পারেন অনেক কিছু জানতে পারবেন।

Tuesday, October 3, 2017

কর্তাভজা সম্প্রদায় - The relegious community of West Bengal

কর্তাভজা হলো বৈষ্ণব সম্প্রদায় এর মতোই একটি ধর্মীয় জাতি। আপনারা  সকলেই জানেন বৈষ্ণব এর উৎপত্তি ,  তার বিস্তৃত সম্পর্কে। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপ গ্রামে এর উতৎপত্তি। ধর্মগুরু সর্বপ্রথম এই ধর্মের মাহাত্ম প্রচার শুরু করেন। ধীরে ধীরে তা সারা রাজ্যে এমনকি সারা দেশে ও পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। এই বৈষ্ণব সম্প্রদায় এর একটি ভাগ হলো কর্তাভজা। আবার অনেকে বলেন বলেন কর্তাভজা সম্পূর্ণ আলাদা একটি ধর্ম , এর  সাথে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কোনো সম্পর্ক নেই।যাই হোক আমি বিভিন্ন বই , ম্যাগাজিনে , ঘেটে অনেক তথ্যঃ প্রকাশ করলাম , যেইগুলো আমার হয়তো অনেকেই জানি না। তাই আমি  আজকে তোমাদের কর্তাভজা সম্প্রদায়ের গল্পটা বিস্তারিত আলোচনা করলাম। 


জায়গাটা হলো নদীয়া জেলার অন্তর্গত কল্যাণী নামক গ্রামের ঘোষপাড়া এর একটি অঞ্চল। এইখানে আসতে হলে শিয়ালদাহ (কলকাতা )  থেকে ট্রেন এ করে বর্তমানে কল্যাণী এর ঘোষপাড়া স্টেশনে নামতে হবে। এইখানে সতীমাতা নাম এ একজন এর মন্দির আছে। চলতি কথায় বলা হয় সতীমাতা এর মন্দির। এই সতীমাতা মন্দির কে ঘিরে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সব ইতিহাস। তবে পুরুষদের থেকে  স্ত্রীলোকদের আধিক্য  বেশি এই দলে। এই ধর্ম সম্পর্কে "নদিয়ার ইতিহাস " গ্রন্থে পাওয়া যায় - " মেয়ে হিজড়ে পুরুষ খোজা , তবে হয় কর্তাভজা " . আমি নিজেও এর অর্থ বুজতে পারিনা। খোঁজ নিলে দেখা যাবে পুরুষ দের থেকে মহিলা দের সংখ্যা প্রায় তিন গুন বেশি। এই ধর্ম একসময় বৈষ্ণব ধর্মের পরেই এর স্থান ছিলো। কিন্তু এখন আর এর অবস্থা প্রায় লুপ্ত। এই ধর্মের অনুরাগী আর প্রায় নেই বললেই চলে। নারী ও পুরুষ একসাথে এই ধর্মে বসবাস করায় সর্বনাশ সম্ভবত শুরু হয়ে গিয়েছে। তবুও সতীমাতা যেন এইখানে জীবিত। 

এই সম্প্রদায়ের আদি পুরুষ হলো আউলচাঁদ। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে ঈশ্বর হিসাবে মান্য করেন। তাহাদের মতে শচীনন্দন শ্রী চৈতন্যদেব জগন্নাথ দেবের অঙ্গে অপ্রকট হয়ে অলক্ষ্যে আলোরপুর পরগনার খোদাবলী গ্রামে( বর্তমানে সেটি কোথায় কেউ জানে না ) বসবাস শুরু করেন। পরে তিনি এক বালকবেশে উলগ্রামে আগমন করেন (বর্তমানে যেটি বিরনগর নামে পরিচিত) . ওই বালক পরে পূর্ণচন্দ্র নামে পরিচিত হন। আরো পরে বিভিন্ন ঘটনাবলী এর মধ্যে দিয়ে তার জীবন অতিবাহিত হয় ও তিনি  বাজরা গ্রামে এসে উপস্থিত হন। এই গ্রামে থেকেই তিনি সর্বপ্রথম তার ধর্মকর্ম শুরু করেন ও শীষ্যত্বও দিতে শুরু করেন। তাঁর প্রথম শিষ্য হল হটুঘোষ। ধীরে ধীরে তাঁর এইধর্মের প্রভাব বাড়তে শুরু করে ও আরো লোকতার শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে শুরু করেন। ক্রমে তার শিষ্যের সংখ্যা ২২ জন হয়ে ওঠে। যদিও এই ২২ জন শিষ্য সম্পর্কে বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। সেগুলি পরের ব্লগে আলোচনা করা হবে। 

এই  আউলচাঁদ এর ২২ জন শিষ্যের মধ্যে একজন বিখ্যাত শিষ্য হল রামসারণ পাল। বাকিদের সেইরকম কোনো খোঁজ ও পাওয়া যায় না। তাদের সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। যদিও খোঁজ করে ১-২ জন শিষ্য দের বংশের খোঁজ পেয়েছি। যদিও তাদের   বর্তমান প্রজন্মের আর  কাউকেই আজকাল পাওয়া যায় না। এবং যারাও দূর সম্পর্কের এক ২ জন আছেন তারা আর এইসব ইচ্ছুক নয়। কর্তাভজা থেকে শত হাত দূরে। আবার রামসরণ পালের শিষ্যত্ব গ্রহণ সম্পর্কে অনেকে অনেক মতবাদ বলে থাকেন। যাই হোক, যাই মতবাদ সত্যি হোক না কোনো  আমি যাচ্ছি পরবতী আলোচনায়। এই রামসারণ এর স্ত্রীর নাম ছিলো সরস্বতী। এই সরস্বতীর গর্ভে একটি পুত্র জন্মগ্রহণ করেছিলো। তাঁর পুত্রের নাম রামদুলাল। রামদুলাল এর নেতৃত্বে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের বিশেষ উন্নতি সাধন করেছিলো। এই রামদুলাল চারিটি স্ত্রী ছিলো।  তাঁর সব স্ত্রীর গর্ভে আবার পাঁচ টি পুত্র সন্তান হয়। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে  কুঞ্জবিহারী - তাঁর কোনো সন্তান সন্তানদিই ছিল না। মধ্যমা গর্ভে রাধামোহন ও মাথুরামোহন বলে যে দুটি সন্তান ছিলো তারাও ছিলো নিস্সন্তান। পরের স্ত্রীর গর্ভে ঈশ্বর পাল ও চুতুর্থার গর্ভে ইন্দ্রাপাল জন্মগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রামদুলাল এ অন্যতম। এই রামদুলাল ১২৩৯ সালের চৈত্র মাসের কৃষ্ণা ত্রয়দশী তিথিতে বারুণীর দিনে মৃত্যুবরণ করেন। যেহেতু কোনো পুত্র সন্তান তাঁর যোগ্য পরিচিত হয়নি তাই রামদুলাল এর বৃদ্ধ মাতা সতীমাতা এই ধর্মের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তিনি আরো নামে  পরিচিত -  শচীমাতা , শচীমা , সতীমা ইত্যাদি। এই দোল প্রকাশের কিছুকাল পরেই ১২৪৭ সালের অশ্বিন মাসে সতীমাতা দেহরক্ষা করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর চতুর্থ পুত্র এই সম্প্রদায়ের মালিক হিসাবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন। এই ঈশ্বরচন্দ্রের আবার দুই পুত্র ছিলেন , তাহারা হলেন - ধরণী পাল ও বীরচাঁদ পাল। আবার এদিকে ইন্দ্রাচন্দ্রের তিন পুত্র ছিলো - পূর্ণচন্দ্র , রসিকলাল ও সত্যাচারণ। ইন্দ্রাপাল মারা গেলেন তাঁর অসম্মতিতে রসিক ও সত্ত্যচরণ পৃথক ভাবে কর্তাভজা চালনা শুরু করেন। রসিকলালের পরবর্তী কালে তাঁর পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ও সত্যাচারণ এর পুত্রদিগন একসাথে সম্প্রদায় চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কালের ক্রীড়ায় ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে বিবাদী শুরু হয় ও গদি এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাদের মধ্যে ভক্তি , প্রেম , সত্যনিষ্ঠা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাদের সেই সত্যনিষ্ঠা , সেই শ্রী ও সৌষ্ঠব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কিন্তু সতীমাতা এর সেই দল আজ ও  ইতিহাসের নীরব সাক্ষ্মীই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উপরের চিত্রটি সেই সতীমাতা এর এ কথা বলে। 

যাই হোক না কেন , আজ এই সতীমাতা একটি  গুরুত্বপূর্ণ , পুণ্যার্থী দের মন্দির হিসাবে পরিচিত। এইখানে দোলযাত্রা উপলক্ষে অনেক বড় মেলা হয়। সেই মেলায় বিশেষ ভাবে সতীমাতা এর নাম কীর্তন ,  পূজা হয়ে থাকে। সতীমা এইখানে বিশেষ ভাবে জাগ্রত।  মন্দির টি খুব ই  সুন্দর। যারা ইচ্ছুক তাঁরা  একবার এসে দেখে যেতে পারেন।

Thursday, July 27, 2017

The 12 houses in astrology - জ্যোতিষ কুষ্ঠি তে ১২ টি ঘরের কোনটির কি কাজ ?

আমরা সকলেই জানি জ্যোতিষ এ ১২ টি ঘর আছে। এই ১২ টি ঘর ( বা ১২ টি ভাব ) থেকে মানুষের সারা জীবনের সব রকমের বিচার ও বিবেচনা  করা হয়। কিন্তু এই ১২ টি ঘরের কোনটির কি কাজ ? তা আজ বলা হলো - 

প্রথম ঘর( তনু  ভাব ) - স্ব , স্বত্বা , মানসিক অবস্থা ও তার রূপ, শরীর , সংবিধান , স্বাভাবিক প্রকৃতি, ব্যক্তিত্ব, চরিত্র, মেজাজ, অহং, অভিজ্ঞতাগত স্ব, স্ব মূল্যের অনুভূতি, সম্মান, খ্যাতি, জাঁকজমক, সাধারণ কল্যাণ, সুখ , সমাজে অবস্থান, স্বাস্থ্য, রুপ, জীবনীশক্তি, দীর্ঘায়ু, শত্রুদের উপর জয়লাভ , শক্তি, তেজ , জন্মস্থান। 

দ্বিতীয় ঘর( ধন ভাব) - ধন , খাদ্য , পান করা , বক্তৃতা , পিতামাতার পরিবার , স্ব-তৈরি পরিবার , চলমান সম্পত্তি , অলঙ্কার , রত্ন , মূল্যবান ধাতু , দৃষ্টি , আত্মবিশ্বাস , প্রফুল্লতা , শিক্ষা , স্মৃতি ,মনের দৃঢ়তা ,জ্ঞানের মৌখিক অভিব্যক্তি , আয়ের উৎস , অন্যদের রক্ষণাবেক্ষণ। 

তৃতীয় ঘর (সহজ ভাব ) - প্রেরণা , স্বার্থ , শখ , ক্রীড়া , আনন্দ , সহায়তা , কর্মচারী , প্রতিবেশী , স্বল্পমেয়াদী ইচ্ছা , ছোট ভ্রমণে , সংক্ষিপ্ত পরিচিতি , শক্তি , বীরত্ব , সাহস , মনোবল , আধ্যাত্মিক চর্চা মধ্যে দীক্ষা , কানের দুল , উদ্গাতা , অভিনয় প্রতিভা , বাদ্যযন্ত্র উপর বাজানো , ম্যানুয়াল দক্ষতা , কম্পিউটার দক্ষতা , বাবা-মার মৃত্যু। 

চতুর্থ ঘর (বন্ধু ভাব ) - মন , হৃদয় , অনুভূতি , সুখ , কাছের বন্ধু, পরিবারের সদস্যগণ , মা , শুভাকাঙ্ক্ষী , নিজের দেশ , ঘর , বাগান , ভূগর্ভস্থ ভাণ্ডার , জমি সম্পত্তি , কৃষি , পশু , পবিত্র স্থান , নৈতিক গুণাবলী , দেবতা , চরিত্র , খ্যাতি , শিক্ষা , পাণ্ডিত্য , চূড়ান্ত ফলাফল। 

পঞ্চম ঘর ( পুত্র ভাব ) - উদ্ভাবনী প্রতিভা , জ্ঞান , শিক্ষা , স্মৃতি , বিচার , বিচক্ষণতা , পরামর্শ , অতীত জীবনের যোগ্যতা , দেবতা এবং ব্রাহ্মণদের প্রতি শ্রদ্ধা , মন্ত্র , তন্ত্র , পুণ্য , গুণ , শাসক , ক্ষমতা , রাজপদ , কর্তৃত্ব , সাহিত্যিক কাজ , আমোদপ্রমোদ , শিশু , শিষ্য , ধন , সমৃদ্ধি , পত্নী প্রকৃতি

ষষ্ঠ ঘর ( অরি ভাব ) - উদ্বেগ , বাধা , শত্রু , চোর , দোষ , চ্যালেঞ্জ , পরীক্ষা , পূর্ণতা এর জন্য তর্ক , আত্ম উন্নতি এর উপায় ও পদ্ধতি , প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা , বাধা কে সুযোগ এ পরিণত করার সামর্থ , মতের বিভেদ , ঋণ , দ্বন্দ্ব , রোগ , দুঃখ , আহত , কর্ম , রোজ দিনের কাজ, জেল , পোষ্য , চতুস্পদ সম্পর্কিত জিনিস , দান গ্রহণ।

সপ্তম ঘর ( যুবতী ভাব ) - স্বামী , স্ত্রী , অর্ধাঙ্গিনী , সঙ্গিনী , প্রেমিকা , প্রেম , সঙ্গী , বিবাহ , বন্ধন , অংশীদার , যৌনতা , যৌন সম্পর্ক , স্বল্প মেয়াদি ইচ্ছা , ব্যাবসার বন্ধু , ব্যাবসার সাথী , সহযোগিতা , সমঝোতা , বাণিজ্য , ব্যবসা , ভ্রমণ , মামলা , বিদেশ বসবাস , সঙ্গী/ সঙ্গিনী  এর প্রকৃতি , সঙ্গী / সঙ্গিনী এর চরিত্র , সঙ্গী/সঙ্গিনী এর স্বভাব , পোষ্য , বাইরের পৃথিবীর সাথে সম্পর্ক , শিশু ও সন্তান থেকে সুখ।

অষ্টম ঘর ( রন্ধ্র ভাব ) - আয়ু , পরিবর্তন , ফাঁক , বিশ্ব ব্রহ্মণ্ধ এর নিয়ম , বর্তমান অতীত ও ভবিষ্যাৎ সম্পর্কে জ্ঞান , সিদ্ধি লাভ , পুনর প্রজন্ম , পুনঃর্জন্ম , ধারাবহিকতা , বিপদ , শত্রু , মৃত্যু , মৃত্যুর রাস্তা , যেভাবে মৃত্যু হতে পারে , স্ত্রীর সম্পত্তি , এ উপার্জিত সম্পত্তি , ভূতলের জিনিস , লুক্কায়িত সম্পত্তি , রহস্স্যময় জীবন , দূর দেশে ভ্রমণ।

নবম ঘর ( ধৰ্ম ভাব ) - ধর্ম , প্রকৃতির সমর্থন , অতীত জীবনের বুদ্ধি , ভাগ্য , জ্ঞান , প্রাচীন বিদ্যা , বৈদিক বিজ্ঞান , মনোযোগ , মেডিয়েশন , জীবন দর্শন , পপ্রার্থনা , নৈতিকতা , নীতিশাস্ত্র , উচ্চশিক্ষা , পেশগত শিক্ষা , বিদেশ ভ্রমণ , বাতাসে ভ্রমণ , গুরু। 


দশম ঘর ( কর্ম ভাব ) - কার্যকলাপ , পেশা , সামাজিক পরিচিতি , পারিপার্শিক পরিচিতি , প্রতিপত্তি , সামাজিক সন্মান , সরকারি সন্মান , উন্নতি , রাজসন্মান , রাজধন , খ্যাতি , শাসনকরার ক্ষমতা , শাসক দলের শক্তি , সুখ , বিদেশ ব্যবসা , কাপড় , বস্ত্র।

একাদশ ঘর ( লাভ ভাব ) - আয় , লাভ,  দীর্ঘদিনের আসা , মনোস্কামনা , স্বপ্ন পূরণ , জীবনে আশা , ভালো খবর , দাদা , দিদি , বন্ধু বর্গ , জীবনে বিভিন্ন বাধা , বিবিধ রোগ।

দ্বাদশ ঘর ( ব্যয় ভাব ) - খরচা , ব্যায় , ক্ষতি , অপব্যয় , আধ্যাত্বিকতা , খ্যাতি নষ্ট , বিদেশে ভ্রমণ , বিদেশ যাত্রা , বিদেশ সাফল্য , একাকিত্ব জায়গা , জেল , জরিমানা , হাসপাতাল , বিছানার আনন্দ , গুপ্ত শত্রুতা , দামি আসবাব , বিবাহিত জীবনে বিছানার সুখ।

যে ঘরে যেই গ্রহ অবস্থান করে বা যেই গ্রহ যেই ঘর কে দেখে , তারা সেই কাজ গুলি সম্পন্ন করে থাকে।

Friday, July 21, 2017

আয়ুর্বেদ - ইতিহাস ও তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ - বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা ও তার পদ্ধতি

আয়ুর্বেদ এর ওপর নাম বৈদক্ষ। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান থেকে আমরা এই আয়ুর্বেদ সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারি। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান এ আছে এই আয়ুর্বেদ হলো চারটি বেদের সার। একপ্রকার চিকিৎসা বিজ্ঞান। প্রাচীন গাছ গাছড়া থেকে ঔষধ তৈরি হতো ও সেই ওষুধ চিকিৎসা বিজ্ঞান এ ব্যবহৃত হতো। অবশ্য কশ্যপ মুনির মতে এটি হলো পঞ্চম বেদ। অন্যমতে অথর্ব বেদের একটি উপাঙ্গ হলো আয়ুর্বেদ। ঋকবেদে বায়ু , পিত্ত , কফ এবং অথর্ব বেদে নর কঙ্কাল এর উল্লেখ আছে। বৈদক অর্থে ক্লীবলিঙ্গে অষ্টাঙ্গে আয়ুর্বেদ। 

ব্রহ্মসংহিতা মতে , অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ এর নয়টি বিভাগ - কায় চিকিৎসা , শল্য চিকিৎসা , সালাক্ক চিকিৎসা , ভূতবিদ্যা , কুমার ভৃত্য , ওগদ চিকিৎসা , রসায়ন চিকিৎসা , বাজীকরণ চিকিৎসা ও  পশুচিকিৎসা। পশুচিকিৎসা বাদ দিয়ে আটটি শাখা মিলে অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ। নিচে আমরা আয়ুর্বেদ এর বিভিন্ন শাখাগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করলাম।

কায় চিকিৎসা - এটিও হলো দেহের যে কোনো স্থানে রোগের চিকিৎসা। এটি দুই প্রকার। একটি হলো শারীরিক , আর একটি হলো মানসিক। বায়ু , পিত্ত , কফ একসাথে কুপিত হয়ে যে রোগ ঘটায় তাহলে তাকে স্বাভাবিক রোগ বলা হয়। বায়ু , পিত্ত ও কফ এর সুষম অবস্থার নাম সমাগ্নি। এই তিনের স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাতে তীক্ননাগ্নি , মন্দাগ্নি ও বিসমাগ্নি অবস্থা দেখা দিতে পারে।বিসমাগ্নি থেকে দেখা ডে বাতজ রোগ। তীক্ননাগ্নি দেখা যায় পিত্তজ্ব রোগ ও মন্দাগ্নি থেকে দেখা দেয় কফয রোগ। স্বাভাবিক রোগ ছাড়া আরো দুই রকমের রোগ দেখা যাই , তা হলো - সংক্রামক রোগ ও আসা রোগ।  শরীর গত বায়ু কে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হলো - প্রাণ , অপান , ব্যান , সমান ও উদ্যান। বায়ু প্রকৃতির লোকের দেহে ক্ষিতি ও অপ এর পরিমান কম থাকে। পুষ্টির অভাবে দেহের ত্বক ও কেশ শুকিয়ে যায়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষীণ ও রোগা হয়ে পরে। দেহ ও মনে দৃঢ়তা নাও থাকতে পারে। স্নায়ু তন্ত্রের উত্তেজনা প্রবল হয়ে উঠে , ও একটুতেই বাতজ ব্যাধি দেখা যায়। আয়ুর্বেদে ৮০ প্রকার বায়ু নিধান সহ বিস্তৃত বর্ণনা করা আছে। চরকের মতে বস্তি , মলাশয় , কোমর , পদযুগল ও পায়ের হাড়গুলি , পঞ্চদশ রোগের উৎপত্তির কারণ। এই পিত্ত দেহের তাপ ও পরিপাক শক্তি কেও নিয়ন্ত্রণ করে। পিত্ত প্রকৃতির লোকেদের দেহের গঠন হয় মাঝারী। দেহে ও মনে অনেক ক্ষুদা ও তৃষ্ণা থাকে। দেহ থেকে অনেক ঘাম , মল ও প্রসাব নির্গত হয়। তাদের গায়ের চামড়া উজ্জলা ও মসৃন থেকে তবুও সহজে কুঞ্চিত হয়ে পরে। ধূর্ধর্ষ সাহস থাকলেও সহজে ক্লান্ত হয়ে পরে। অতি তাড়াতাড়ি জরা ও বার্ধ্যক্ষ এসে গ্রাস করে। পিত্ত বিকৃত হলে তিখ্যাগনি দেখা দেয় ও পরিণামে অজীর্ণ , গ্রহণী , জ্বর ও চক্ষু রোগ দেখা দেয়।  এরপর কফ।  এই কফ দেহের স্নিগ্ধতা , জলীয় ভাব ও পিছল গতি কে নিয়ন্ত্রণ করে। মাথা , গ্রীবা , অস্থিসন্ধি , মেদ ও প্রধানত বুক কফের স্থান। কফের  প্রকোপে সর্দি , কাশি ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। 

শল্য চিকিৎসা - সুশ্রুত তে শল্য চিকিৎসার অদ্ভুত উৎকর্ষতা দেখা যায়। হিপোক্রেটিস এর ও বহু আগে ভারতে সল্ল চিকিৎসা উন্নতি লাভ করেছিলো। সুশ্রুত সংহিতা তে বিভিন্ন অস্ত্র ও চোদ্দ রকম বন্ধনী এর বিবরণ আছে। হার ভাঙলে ও হাড় সরে গেলে বিশেষ সল্য চিকিৎসার উল্লেখ আছে। ভাঙ্গা হাড় ঠিক জায়গায় বসিয়ে কাঠ বা বাঁশের ফলক দিয়ে বাঁধবার ব্যবস্তা বর্ণনা করা আছে। অস্ত্রে কাটা বিভিন্ন প্রকার ক্ষতের বিবরণ ও দেওয়া আছে এই গ্রন্থে। গাল থেকে মাংস কেটে নিয়ে সেই মাংস কানে লাগানোর ব্যাবস্তা ছিলো সেই সময়। নাভি এর একটু নিচে থেকে বাঁ দিক চিরে নিয়ে পেটের ভিতরে অস্ত্রপ্রচার করা হতো। অন্ত্রের কাছে কেটে নিয়ে আবার জুড়ে অস্ত্রপ্রচার করা হতো। প্রসবের সময় প্রয়জন হলে অস্ত্রপ্রচার ও চোখের ছানি ও কাটা হতো। ভোজ প্রবন্ধে আছে অস্ত্রপ্রচার এর আগে রোগীকে ভেষজ জিনিস দিয়ে সংজ্ঞাহীন করা হতো। কনুই এর সামনের দিক থেকে রক্ত মোক্ষণ , পেট ও জলমুস্ক করে দেবার ব্যবস্তা ইত্যাদি ষোল্ল চিকিৎসার অন্তর্গত। 

শালক্ক চিকিৎসা - অক্ষের উপর যে কোনো অংশের চিকিৎসা কে বলে শালক্ক চিকিৎসা বলে। অর্থাৎ চোখ, কান , নাক , গলা এর উপর চিকিৎসা। বিভিন্ন তন্ত্রে এইরূপ চিকিৎসার বিভিন্ন বিবরণ আছে। 

ভূতবিদ্যা - মানসিক রোগের চিকিৎসা। চরকে অষ্টম অধ্যায়ঃ এ , সুশ্রুতে ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। 

কুমার ভৃত্ - সুশ্রুতে উত্তর তন্ত্রে বারো টি পরিচ্ছেদ , কাশ্যপ সংহিতা ও বৃদ্ধ জীবক তন্ত্রে শিশুরোগের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। সদ্যোজাত স্বসনহীন শিশু কে কৃত্তিম শ্বসন এর দ্বারা বাঁচিয়া তোলার বিবরণ ও আছে আয়ুর্বেদ এ।

ওগদ চিকিৎসা - এটি হলো নানা বিষের ক্রিয়া জনিত রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা শাখা। রোগের লক্ষন , মৃত্যুর পরবর্তী পর্যবেক্ষন ও এই প্রকার চিকিৎসার অন্তর্গত। 

 রসায়ন চিকিৎসা - পারদ , লোহা ইত্যাদি এর মাধ্যমে যে চিকিৎসা তাকে রসায়ন চিকিৎসা বলে। 

বাজীকরণ চিকিৎসা - বীর্যধারন ক্ষমতা , প্রজনন শক্তি সম্পর্কিত যে বিদ্যা তাকে বাজীকরণ চিকিৎসা বলে। 

আয়ুর্বেদ আরো বড়। আগামী পোস্টে আরো বাকি বিষয় গুলো আলোচনা করা হবে। আসা করি সকলের ভালো লাগলো। কমেন্ট ও লাইক করবেন।

Thursday, July 20, 2017

শিবলিঙ্গ - কি এবং কিভাবে এর পূজা ও আরাধনা করা হয় ?

শিবলিঙ্গ একটি বিশেষ মূল্যবান জিনিস - এটি একটি সর্ব শক্তির অধিকারী একজন দেব এবং প্রাচীন কাল থেকে এটির আরাধনা হয়ে আসছে। আমরা সকলেই জানি হিন্দু ধর্ম দেব দেবী দের পূজা অর্চনা এর মধ্যমে সর্ব প্রকার মনোস্কামনা পূর্ণ করার চেষ্টা করেন। পুরাণ অনুযায়ী ৩৩ কোটি দেবদেবী বর্তমান। কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু দেব দেবী আছেন যারা সাধারণভাবে পূজিত হন ও গৃহে অধিষ্ঠিত হন। এই দেব দেবী দের মধ্যে শিব হলেন অন্যতম। কিন্তু কোনো শিব এর পূজা করা হয় ? কিভাবে করা হয় ? এর পিছনে পুরাণ কি বলছে ? শিব লিঙ্গ জিনিসটি আসলে কি ? কিভাবেই বা তার আরাধনা করবেন ?

হিন্দুরা মূর্তি আকারে বিবিধ দেব দেবী দেড় পূজা অর্চনা করলেও পুরাণ অনুযায়ী ঈশ্বর নিরাকার , অদ্বিতীয় , চৈতন্য  স্বরূপ ও সর্ব্বব্যাপী। তাই আমরা বলতে পারি পুরাণ মূর্তিপূজা করতে অসম্মত। পুরাণ বলছে প্রাণ বিনষ্ট হোক আর শিরোস্চিন্ন হোক ত্রিলোচন কে পূজা না করে ভোজন করা অনুচিত। এই ত্রিলোচন কি ? ইহাই ঈশ্বর। যাঁর তৃতীয় চোখ বর্তমান। যা মানুষের নেই। এই তৃতীয় চোখ সম্পন্ন অবয়ব ই ঈশ্বর। তাঁকেই ত্রিলোচন বলা হয়ে থাকে। পুরাণ আদেশ দিয়েছ হে প্রিয়ে , হে পরমেশ্বরী সমস্ত জীব এ পরম ভক্তি সহ ব্রহ্মময় শিব লিঙ্গের পূজা করিবে। অর্থাৎ স্নান করে পূজা না করে ভোজন করা মানা। শিবলিঙ্গের পূজা না করে , অগ্নিহোত্র করা , বেদ পাট , ভেন্দান্ত , উপনিষদ পাট করলেও তা সফল হয় না। সহস্র বার ভিন্ন যোনী তে জন্ম করেও শিবলিঙ্গের পূজা না করলে সফল হয় না। পুরাণ অনুযায়ী ব্রম্হান্ডই প্রকৃতিতো নিরাকার পরমেস্বর জ্ঞাপক। এটি বোধক ও স্বরূপ ও লিঙ্গ বলে পূজা করা হয়। তার শক্তি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।  তার শক্তি আন্দাজ করা যায় না। তাঁহার অনন্ত শক্তির ইয়ত্তা করা যায় না। তবুও বুদ্ধিমান ব্যাক্তি তাহার মহিমার ক্ষুদ্র ইঙ্গিত কেই তাহার অচিন্তনীয় শক্তির পরিচয় পেয়ে থাকেন। লিঙ্গ শব্দে  শিবের উপস্থ বা মেট্র উপলখ্হিত হয় না। লিঙ্গ তার বিভূতি , চিহ্ন বা মূর্তি বিশেষ মাত্র। শিব লিঙ্গ শিবের লিঙ্গ না , এটি জ্ঞাপক মূর্তি বিশেষ এটিকে ভাবভরে পূজা করলে জীবের ব্রম্ভ জ্ঞান এর উদ্রেক হয়। প্রাচীন  ঋষি এইভাবে লিঙ্গ কে হৃদয়ের সামগ্রী করে সিভি লিঙ্গ কে পূজা করতেন। তারা শিবলিঙ্গের পূজা অন্তরে বাইরে করতেন। কেউ , শিলা , স্পটিক কেউ বা আদি মহামূল্য বান রত্নে শিবলিঙ্গ তৈরি করে পূজা অর্চনা করতেন। এই লিঙ্গ ব্রম্যান্ড স্বরূপ , গৌরী পট্ট বা বেদিকা ভোগন মায়া  প্রকৃতি। এই মায়া হতে বেরিয়ে আসা মায়ার আশ্রিত অখণ্ড চিহ্নই সাক্ষাৎ দেব দেবী দিগকে জানিবার একমাত্র উপায়।বিশুদ্ধ পরমাত্মা লিঙ্গ নামক কোনো শরীর চিহ্ন নয় , এটি ঈশ্বরের অনুমাপক বা বিজ্ঞাপক চিহ্ন অর্থাৎ ব্রমান্ডই লিঙ্গ বলে ধরা হয়। সংখ্যসূত্র কার বলেছেন " যাহার কোনো কারণ আছে , যাহা অনিত্য , অব্যাপক , ক্রিয়াবান , অনেক ও অন্যের আশ্রিত তাহার নাম "লিঙ্গ " .

আর বেশি কিছু বলার নেই , সমস্ত জগৎ শিবলিঙ্গ অর্চনা করে স্স্থির ভাবে স্তিতি করিতেছে , এতে সংশয় নেই।

Monday, July 17, 2017

সংখ্যাসার - প্রাচীন পুরান থেকে সংগৃহিত একটি টিকা

অয়নদ্বয় :
দাক্কিনায়ান - সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হইয়া দক্কিন দিক দিয়ে যে ছয়মাস অস্তগত হন , তাকে দাক্কিনায়ান বলে। 
উত্তরায়ণ - উত্তর দিক দিয়ে যে ছয়মাস অস্তগত হন তাকে উত্তরায়ণ বলে। 

পক্ষদ্বয় :
শুক্লপক্ষ - একটি পূর্ণিমা থেকে অমবস্যা পর্যন্ত সময়কাল কে বলে শুক্লপক্ষ। 
কৃষ্ণপক্ষ - অমবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কাল কে বলে কৃষ্ণপক্ষ। 

ঋণত্রয় :
ঋষিঋন - বেদ  , পুরাণ , বেদান্ত ইত্যাদি পাঠ করার ফলে যে ঋণ তৈরী হয় তাকে বলে ঋষিঋন। 
পিতৃঋণ - সন্তানোৎপাদনে যে ঋণ পিতার কাছে হয় তাকে বলে পিতৃঋণ। 
দেব ঋণ - যাগঃ যজ্ঞ , সম্পদ দানে যে ঋণ  হয় তাকে বলে দেব ঋণ। 

ত্রিজগৎ :
সর্গ - যেইখানে দেব দেবী দিগের বাস 
মর্ত্য - যেইখানে মানুষ , পশু , বৃক্ষ এর বাস। ইহা নরোলক হিসাবেও পরিচিত। 
পাতাল - ইহা অন্ধকার জগৎ। 

ত্রিগুন :
সত্ত্ব - প্রকৃতির প্রথম গুন্ দ্বারা সৃষ্ট। 
রজঃ - প্রকৃতির দ্বিতীয় গুন্ দ্বারা সৃষ্ট। 
তম  - প্রকৃতির তৃতীয় গুন্ দ্বারা সৃষ্ট। 

ত্রিতাপ :
আধিদৈবিক - বজ্রপাত , উল্কাপাত , প্রভৃতি যে তাপ দৈবাধীন  ঘটিয়ে থাকে। 
আধিভৌতিক - যে দুঃখ মনুষ্য , পশু ও পক্ষই হইতে হইয়া থাকে। 
আধ্যাতিক - শরীর কিংবা মনেতে বাতপিত্ত প্রভৃতির জন্য যে কাম ক্রোধাতির আধিক্য নিমিত্ত যে দুঃখ হয় তাকে বলে আধ্যাতিক।

এছাড়াও রয়েছে -

অষ্টগন্ধ - চন্দন , গুগুল , কুম্কুম , অগুরু , গোরোচনা , জোটামাংসী ইত্যাদি। 

অস্ট গুন্ - দয়া , ক্ষান্ত , অনুসূয়া , শৌচ , অনায়াস , মঙ্গোল , অকার্পণ্য , অস্পৃহা।

অষ্ট তারিণী - তারা , উগ্রা , মাহগ্রা , ব্রজা , কালী , শাস্বতী , জামেস্বরী , চামুন্ডা।

অষ্টদিকপাল - ইন্দ্র , অগ্নি , জম , নৈঋত ই , বরুন , মরুৎ , কুবের , ইশ।

অষ্ট দ্রব্য - অসস্থ , উদোমবুর , পিলঃখ , ন্যাগ্রোধ , কাঠ , তিল ,সিদ্ধার্থ , পায়স , আজ্জ।

অষ্টধর্ম - সত্য , অশৌচ , হিংসা , অনুসূয়া , ক্ষমা , অনৃশংসতা , অকার্পণ্য , সন্তোষ।

অষ্টধাতু - সোনা , রুপা , তামা , রাঙ , জাসদ( ইস্পাত ) , সীসা , লোহা , পারদ।

অষ্টনাগ - অনন্ত , বাসুকি , পদ্ম , তক্ষক , কুলির , কর্কট , শঙ্খ , মহাপদ্ম।

অষ্টনিধি - পদ্ম , মহাপদ্ম , মকর , কচ্ছপ , মুকুন্দ , নীল , নন্দ , শঙ্খ।

অষ্ট পরিষদ - নন্দ , সুনন্দ , চন্ড , প্রচন্ড , কুমুদ, কুমুদক্ষন , বল।

অষ্ট বিনায়ক - গণপতির ৮ টি মন্দির। ভীম ও মুঠমুলা সঙ্গমে রঞ্জনগাওঁ , মর্মগাঁও , থিউর , লেন্দ্রি , পুনাতে অঝোর , পালিত , খান জেলার মধ , আমেদনগর জেলার সিদ্ধাতেক।

অষ্ট বিবাহ - ব্রাহ্ম , দৈব , আর্য , প্রজপতা , গন্ধর্ব , অসুর , রাক্ষস , পিশাচ।

অস্ত বৈভব - অতিসাঙ্গ , বুরু , চন্ড , ক্রোধ , উন্নমত্ত , কপালি , ভীষণ , সংহার।

অষ্ট মার্গ - সম্যক দৃষ্টি , স্বসংকল্প , স্ববাক , স্বকর্ম , সজীব , স্বব্যায়াম , স্বসৃতি , স্বসমাধি।

অষ্ট রস - শৃঙ্গার , বীর , করুল , অদ্ভুত , হাস্য , ভয়ানক , ভীবৎস , রৌদ্র।

অষ্ট রিপু - কাম , ক্রোধ , লোভ , মোহো , মদ , মাৎসর্য , অসূয়া , দম্ভ।

অষ্ট সিদ্ধি - অনিমা , গরিমা , লঘিমা , মহিমা , প্রাপ্তি , প্রকাম্য , ঈশিত্ব , বসিত্ব।

অষ্টাঙ্গ - জানু , পদ , পানি , বক্ষ , বুদ্ধি , শির , বাক্য , দৃষ্টি

অষ্টউপাচার - জল , ক্ষীর , কুশাগ্র , দধি , ঘি , আতপচাল , জব , শ্বেত , , সর্পোশ।

অস্ত রতি / মৈথুন - স্বরণ , কীর্তন , কেলি , প্রেক্ষণ , গুহ্যাভাস , সংকল্প , অধ্যাবসায় , ক্রিয়ানিসপত্ত।

অষ্টাঙ্গবিদ্যা - সড়ঙ্গ চার বেদ , মীমাংসা , ন্যায় , ধর্মশাস্ত্র , পুরাণ , আয়ুর্বেদ , ধনুর্বেদ , গান্ধর্বেদ , অর্থশাস্ত্র।

অস্টাদশপুরান - ব্রম্ভ , পদ্ম , বিষ্ণু , শিব , বায়ু , ভাগবত , নারদীয় , মার্কন্ডেয় , অগ্নি , ভবিষ্য , ব্রহ্মবৈবর্ত , লিঙ্গ , বরাহ , স্কন্ধ , বামন , কুর্ম , মৎস , ব্রম্ভান্ড।

চতুর্বর্গ - ধর্ম , অর্থ , কাম , মোক্ষ।

চতুর্গুণ - স্বত্ব , রজ , তম , চৈতন্য।

চতুর্ভ্রমসত্তা - শান্তি , বৈরাগ্য , উপশম , উপরতি।

চতুর্বন্ধ - আশা , ইচ্ছা , বাসনা , স্পৃহা।


Sunday, July 16, 2017

কে ছিলেন সম্রাট অশোক ? কেমন ই বা ছিলো তার ইতিহাস ?

আমরা অনেকেই ইতিহাস পড়েছি।অনেকেই হয়তো যারা আমার ব্লগ টি পড়ছেন হয়তো ইতিহাসের ছাত্র। তবুও আমরা সম্রাট অশোক সম্পর্কে অনেক কিছু জানি না। তাই আজকে আমি আপনাদের সামনে সম্রাট অশোক সম্পর্কে একটি টিকা তুলে ধরলাম।

সম্রাট অশোক ছিলেন মগধের তৃতীয় সম্রাট। তার অন্য আর এক নাম ছিল।  সেটি হলো প্রিয়দর্শী। তার পিতার নাম ছিলো বিন্দুসার এবং পিতামহ এর নাম ছিলো চন্দ্রগুপ্ত। তাঁর রাজত্বকাল সম্পর্কে বেশি নিখুঁত তথ্য পাওয়া যায় না। ঠিক কবে তিনি রাজত্ব করতেন সেটিও অস্পষ্ট। বিভিন্ন শিলালিপি থেকে আমরা জানতে পারি আনুমানিক ২৭৩ থেকে ২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ তিনি রাজত্ব করতেন। সম্রাট অশোক কে এককথায় ভারতের শ্রেষ্ঠ রাজা হিসাবে ধরা হয়। হয়তো আলেজান্ডার , নেপোলিয়ান এদের থেকে সম্রাট অশোক এর কৃতিত্ব অনেক কম। কিন্তু ভারতের কাছে সম্রাট অশোক এর কৃতিত্ব অনেক এবং বিস্তৃত।ইতিহাস অনুযায়ী সম্রাট অশোক এর একশত ছেলের মধ্যে একজন হলেন সম্রাট অশোক। তিনি সম্রাট হবার আগে তক্ষশীলা ও উজ্জনী তে রাজপ্রতিনিধি ছিলেন। সম্রাট বিন্দুসার এর মৃত্যুর পর তার ছেলেদের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে অনেক সম্যসা ও ঝামেলা শুরু হয়। ইতিহাস বলে , বিন্দুসার এর মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলেদের মধ্যে অনেক ভ্রাতৃবিরোধ দেখা যায়। কথিত আছে , অশোক এর বারো ভাই অভিষিক্ত যুবরাজ সুমন কে ও হত্যা করে ও পরাজিত করেন। তারপর সম্রাট হিসাবে অশোক উন্নীত হন। তাই অশোক এর অভিষেক তার পিত বিন্দুসার এর চার বছর পরে হয়েছিলো। সম্রাট অশোক এর ব্যাক্তিগত জীবনের সেরকম কোনো বিস্তৃত বিবরণ পথ যায়নি। তাই অশোক এর ব্যাক্তিগত জীবন অন্ধকারে থেকে যায়।  বিভিন্ন শিলালিপি থেকে জানা যায় , তার প্রধান মহিষী ছিলেন অসিদ্ধমিত্রা , কারুবাকি , চারুবাকি , দেবী , পদ্মাবতী  ও তিসরক্ষিতা এই ছয়জন। শিলালিপি অনুযায়ী , তাঁর ছেলেরা ছিলেন - মহেন্দ্র , তিবার , কুনাল ও জনৌক। যদিও এইসব তথ্য যথেষ্ট প্রমান নেই ও একশো ভাগ সত্যি নাও হতে পারে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গণ বিভিন্ন মতামত দিয়ে গেছেন। একটি শিলালিপি তে উল্লেখ আছে অশোক এর মৃত্যুর পর তাঁর দুই পুত্র দশরথ ও সম্প্রতি তাঁর রাজত্ব ভাগ করে নিয়েছিলো। বিভিন্ন জায়গা থেকে অশোক এর প্রায় চল্লিশ টি শিলালিপি পাওয়া গেছে। সেগুলি থেকে ও প্রমান পাওয়া যায় যে তিনি তাঁর  ভাইদের হত্যা করেননি। 

আরো বিভিন্ন শিলালিপি থেকে অনেক কথা জানা যায়। জানা যায় তাঁর রাজত্ব কাল সম্পর্কে। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্রাট অশোক যে রাজত্ব পান তার বিস্তার উত্তর পশ্চিমে হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে বাংলার কিছুটা ও হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে পান্নার যদি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। কলিঙ্গ তাঁর অধীন ছিলো না। তাই সম্রাট অশোক কলিগ জয় করার জন্য উদ্দত হন। অশোক রাজা হবার আট বছর পর কলিঙ্গ জয় করেন। অশোক এর কলিঙ্গ যুদ্ধে ১ লক্ষ লোক নিহত হন ও দেড় লক্ষ লোক আহত হন। সম্রাট অশোক রণচন্ডি রুপি হয়ে যুদ্ধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ান। চারিদিকে মহামারী শুরু হয়ে যায়।শুরু হয় দুর্ভিক্ষ , দারিদরিদ্রতা শুরু হয়।  কথিত আছে যে যুদ্ধের এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে সম্রাট অশোক ব্যাপক ভাবে হতাশ ও দুঃখ পান। তাঁর মধ্যে যুধাং দেহি মানসিকতার অবসান হয়। সম্রাট অশোক গভীর অনুশোচনা শুরু করেন। সম্ভবত উপগুপ্ত নাম এক বৌদ্ধ ভিক্ষুক এর কাছে থেকে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। যোদ্ধা অশোক পরিণত হন ধার্মিক অশোক এ। কলিঙ্গ জয় করার পর তিরিশ বছর রাজত্ব কালে আর কোনো যুদ্ধ করেননি। এমন কি তার পরবর্তী উত্তরসূরি দেড় ও তিনি যুদ্ধই না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

ধার্মিক অশোক ধর্মপ্রচার ও করেছিলেন। ধর্ম প্রচার এর জন্য তিনি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধর্ম প্রচারক পাঠিয়েছিলেন। তাঁর ধর্মের বার্তা প্রচারের জন্য ধর্ম প্রচারক রা গিয়েছিলেন দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন রাজ্যে যেমন - চল , পাণ্ড্য , সত্ত্যপুত্র , কেরোলপুত্র রাজ্যে।  এছাড়াও গিয়েছিলেন ব্রম্ভপুত্র , সিরিয়া ইত্যাদি দেশেও। সম্রাট অশোক তাঁর মেয়ে সংঘমিত্রা ও ছেলে মহেন্দ্র কে সিংহল এ পাঠিয়ে ছিলেন। রাজকর্মচারী দের উপর ও আদেশ ছিলো ধর্ম কে প্রচার করার, শান্তির বাণী সর্বত্র ছড়িয়ে দেবার। বিভিন্ন শিলালিপি থেকে জানা যায় , যখন বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন মতের অমিল হতো তখন তিনি , সবাই কে একজায়গায় ডেকে ধর্মীয় সভা ডেকে ঐক্য আনার চেষ্টা করতেন। প্রাণী হত্যা নিয়ে তিনি অনেক সচেষ্ট হয়েছিলেন। সব প্রজাদের তিনি নিজের সন্তান দের মতো মানুষ করতেন। 

সম্রাট অশোক এর বিভিন্ন শিলালিপি পাওয়া গেছে আফগানিস্তান , কাবুল , কান্দাহার , জালালাবাদ , মনসেরা , সাহাবাজগাড়ি , দেরাদুন এর কাশ্মি প্রভৃতি স্থানে। তাঁর  সময় সারা দেশে প্রায় ৮৪০০০ বৌদ্ধ স্তুপ স্থাপিত হয়েছিলো। যদিও সংস্কার এর অভাবে বেশির ভাগে ই নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে মধ্যে প্রদেশ এর রাইসেন জেলা তে সাঁচি সস্তূপটি তাঁর এ স্থাপত্যের পরিচয়। বর্তমানে সরকারি উদ্যোগ এ অনেক স্থাপত্যের সংস্কার হয়েছে। 

Saturday, July 15, 2017

বঙ্কিমচন্দের কপালকুণ্ডলা উপন্যাস পড়েছেন ? কিভাবে যাবেন কপালকুণ্ডলা মন্দির ?

বঙ্কিম চন্দ্রের কপালকুণ্ডলা উপন্যাস পড়েছেন ? কখনো মনে হয়েছে সেইখানে যাবার ? বঙ্কিমচন্দ্রের এর কপালকুণ্ডলা উপন্যাস টি পটভূমিকা কিন্তু আছে। যদি মনে করেন সেখানে যাবেন অবশ্যই যেতে পারেন। ভালোও লাগবে। স্থান টি হলো পূর্ব মেদিনীপুর জেলা এর দারিয়াপুর জেলা - পশ্চিম বাংলা। এই দারিয়াপুর জেলা এর সাথে বঙ্কিম চন্দ্রের এর অনেক কাহিনী, অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এই দারিয়াপুর এ একসময় বঙ্কিমচন্দ্র কাজ ও করতেন। এবং এই পটভূমিকা তাই কপালকুণ্ডলা উপন্যস টি লেখা হয়েছে। 

আসল কপালকুণ্ডলা মন্দির টি বর্তমানে ধূলিসাৎ। তার জরাজীর্ণ অবশিষ্ট টি কেবল ইতিহাস এর নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সরকার ও জনগণ দুই দিক থেকে যেন অবহেলা আর অবহেলা। এই দারিয়াপুর আপনি কাঁথি থেকে যেতে পারেন।  দিঘা থেকে যেতে গেলে পঞ্চাশ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে হবে। কাঁথি থেকে দারিয়াপুর কুড়ি কিলোমিটার দূর।

মন্দির তীর খুব কাছে আছে একটি আলোর ঘর যেটি খুব এ সুন্দর সংরক্ষণ করা হয়।  মনে হয় এটি বেশ প্রয়োজনেই করা হয়। সামনেই রসুলপুর নদী, প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই নদীর ধার সময় কাটাৰ উপযুক্ত পরিবেশ।