আয়ুর্বেদ এর ওপর নাম বৈদক্ষ। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান থেকে আমরা এই আয়ুর্বেদ সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারি। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান এ আছে এই আয়ুর্বেদ হলো চারটি বেদের সার। একপ্রকার চিকিৎসা বিজ্ঞান। প্রাচীন গাছ গাছড়া থেকে ঔষধ তৈরি হতো ও সেই ওষুধ চিকিৎসা বিজ্ঞান এ ব্যবহৃত হতো। অবশ্য কশ্যপ মুনির মতে এটি হলো পঞ্চম বেদ। অন্যমতে অথর্ব বেদের একটি উপাঙ্গ হলো আয়ুর্বেদ। ঋকবেদে বায়ু , পিত্ত , কফ এবং অথর্ব বেদে নর কঙ্কাল এর উল্লেখ আছে। বৈদক অর্থে ক্লীবলিঙ্গে অষ্টাঙ্গে আয়ুর্বেদ।
ব্রহ্মসংহিতা মতে , অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ এর নয়টি বিভাগ - কায় চিকিৎসা , শল্য চিকিৎসা , সালাক্ক চিকিৎসা , ভূতবিদ্যা , কুমার ভৃত্য , ওগদ চিকিৎসা , রসায়ন চিকিৎসা , বাজীকরণ চিকিৎসা ও পশুচিকিৎসা। পশুচিকিৎসা বাদ দিয়ে আটটি শাখা মিলে অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ। নিচে আমরা আয়ুর্বেদ এর বিভিন্ন শাখাগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করলাম।
কায় চিকিৎসা - এটিও হলো দেহের যে কোনো স্থানে রোগের চিকিৎসা। এটি দুই প্রকার। একটি হলো শারীরিক , আর একটি হলো মানসিক। বায়ু , পিত্ত , কফ একসাথে কুপিত হয়ে যে রোগ ঘটায় তাহলে তাকে স্বাভাবিক রোগ বলা হয়। বায়ু , পিত্ত ও কফ এর সুষম অবস্থার নাম সমাগ্নি। এই তিনের স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাতে তীক্ননাগ্নি , মন্দাগ্নি ও বিসমাগ্নি অবস্থা দেখা দিতে পারে।বিসমাগ্নি থেকে দেখা ডে বাতজ রোগ। তীক্ননাগ্নি দেখা যায় পিত্তজ্ব রোগ ও মন্দাগ্নি থেকে দেখা দেয় কফয রোগ। স্বাভাবিক রোগ ছাড়া আরো দুই রকমের রোগ দেখা যাই , তা হলো - সংক্রামক রোগ ও আসা রোগ। শরীর গত বায়ু কে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হলো - প্রাণ , অপান , ব্যান , সমান ও উদ্যান। বায়ু প্রকৃতির লোকের দেহে ক্ষিতি ও অপ এর পরিমান কম থাকে। পুষ্টির অভাবে দেহের ত্বক ও কেশ শুকিয়ে যায়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষীণ ও রোগা হয়ে পরে। দেহ ও মনে দৃঢ়তা নাও থাকতে পারে। স্নায়ু তন্ত্রের উত্তেজনা প্রবল হয়ে উঠে , ও একটুতেই বাতজ ব্যাধি দেখা যায়। আয়ুর্বেদে ৮০ প্রকার বায়ু নিধান সহ বিস্তৃত বর্ণনা করা আছে। চরকের মতে বস্তি , মলাশয় , কোমর , পদযুগল ও পায়ের হাড়গুলি , পঞ্চদশ রোগের উৎপত্তির কারণ। এই পিত্ত দেহের তাপ ও পরিপাক শক্তি কেও নিয়ন্ত্রণ করে। পিত্ত প্রকৃতির লোকেদের দেহের গঠন হয় মাঝারী। দেহে ও মনে অনেক ক্ষুদা ও তৃষ্ণা থাকে। দেহ থেকে অনেক ঘাম , মল ও প্রসাব নির্গত হয়। তাদের গায়ের চামড়া উজ্জলা ও মসৃন থেকে তবুও সহজে কুঞ্চিত হয়ে পরে। ধূর্ধর্ষ সাহস থাকলেও সহজে ক্লান্ত হয়ে পরে। অতি তাড়াতাড়ি জরা ও বার্ধ্যক্ষ এসে গ্রাস করে। পিত্ত বিকৃত হলে তিখ্যাগনি দেখা দেয় ও পরিণামে অজীর্ণ , গ্রহণী , জ্বর ও চক্ষু রোগ দেখা দেয়। এরপর কফ। এই কফ দেহের স্নিগ্ধতা , জলীয় ভাব ও পিছল গতি কে নিয়ন্ত্রণ করে। মাথা , গ্রীবা , অস্থিসন্ধি , মেদ ও প্রধানত বুক কফের স্থান। কফের প্রকোপে সর্দি , কাশি ইত্যাদি রোগ দেখা যায়।
শল্য চিকিৎসা - সুশ্রুত তে শল্য চিকিৎসার অদ্ভুত উৎকর্ষতা দেখা যায়। হিপোক্রেটিস এর ও বহু আগে ভারতে সল্ল চিকিৎসা উন্নতি লাভ করেছিলো। সুশ্রুত সংহিতা তে বিভিন্ন অস্ত্র ও চোদ্দ রকম বন্ধনী এর বিবরণ আছে। হার ভাঙলে ও হাড় সরে গেলে বিশেষ সল্য চিকিৎসার উল্লেখ আছে। ভাঙ্গা হাড় ঠিক জায়গায় বসিয়ে কাঠ বা বাঁশের ফলক দিয়ে বাঁধবার ব্যবস্তা বর্ণনা করা আছে। অস্ত্রে কাটা বিভিন্ন প্রকার ক্ষতের বিবরণ ও দেওয়া আছে এই গ্রন্থে। গাল থেকে মাংস কেটে নিয়ে সেই মাংস কানে লাগানোর ব্যাবস্তা ছিলো সেই সময়। নাভি এর একটু নিচে থেকে বাঁ দিক চিরে নিয়ে পেটের ভিতরে অস্ত্রপ্রচার করা হতো। অন্ত্রের কাছে কেটে নিয়ে আবার জুড়ে অস্ত্রপ্রচার করা হতো। প্রসবের সময় প্রয়জন হলে অস্ত্রপ্রচার ও চোখের ছানি ও কাটা হতো। ভোজ প্রবন্ধে আছে অস্ত্রপ্রচার এর আগে রোগীকে ভেষজ জিনিস দিয়ে সংজ্ঞাহীন করা হতো। কনুই এর সামনের দিক থেকে রক্ত মোক্ষণ , পেট ও জলমুস্ক করে দেবার ব্যবস্তা ইত্যাদি ষোল্ল চিকিৎসার অন্তর্গত।
শালক্ক চিকিৎসা - অক্ষের উপর যে কোনো অংশের চিকিৎসা কে বলে শালক্ক চিকিৎসা বলে। অর্থাৎ চোখ, কান , নাক , গলা এর উপর চিকিৎসা। বিভিন্ন তন্ত্রে এইরূপ চিকিৎসার বিভিন্ন বিবরণ আছে।
ভূতবিদ্যা - মানসিক রোগের চিকিৎসা। চরকে অষ্টম অধ্যায়ঃ এ , সুশ্রুতে ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
কুমার ভৃত্ - সুশ্রুতে উত্তর তন্ত্রে বারো টি পরিচ্ছেদ , কাশ্যপ সংহিতা ও বৃদ্ধ জীবক তন্ত্রে শিশুরোগের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। সদ্যোজাত স্বসনহীন শিশু কে কৃত্তিম শ্বসন এর দ্বারা বাঁচিয়া তোলার বিবরণ ও আছে আয়ুর্বেদ এ।
ওগদ চিকিৎসা - এটি হলো নানা বিষের ক্রিয়া জনিত রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা শাখা। রোগের লক্ষন , মৃত্যুর পরবর্তী পর্যবেক্ষন ও এই প্রকার চিকিৎসার অন্তর্গত।
রসায়ন চিকিৎসা - পারদ , লোহা ইত্যাদি এর মাধ্যমে যে চিকিৎসা তাকে রসায়ন চিকিৎসা বলে।
বাজীকরণ চিকিৎসা - বীর্যধারন ক্ষমতা , প্রজনন শক্তি সম্পর্কিত যে বিদ্যা তাকে বাজীকরণ চিকিৎসা বলে।
আয়ুর্বেদ আরো বড়। আগামী পোস্টে আরো বাকি বিষয় গুলো আলোচনা করা হবে। আসা করি সকলের ভালো লাগলো। কমেন্ট ও লাইক করবেন।
No comments:
Post a Comment