Sunday, July 16, 2017

কে ছিলেন সম্রাট অশোক ? কেমন ই বা ছিলো তার ইতিহাস ?

আমরা অনেকেই ইতিহাস পড়েছি।অনেকেই হয়তো যারা আমার ব্লগ টি পড়ছেন হয়তো ইতিহাসের ছাত্র। তবুও আমরা সম্রাট অশোক সম্পর্কে অনেক কিছু জানি না। তাই আজকে আমি আপনাদের সামনে সম্রাট অশোক সম্পর্কে একটি টিকা তুলে ধরলাম।

সম্রাট অশোক ছিলেন মগধের তৃতীয় সম্রাট। তার অন্য আর এক নাম ছিল।  সেটি হলো প্রিয়দর্শী। তার পিতার নাম ছিলো বিন্দুসার এবং পিতামহ এর নাম ছিলো চন্দ্রগুপ্ত। তাঁর রাজত্বকাল সম্পর্কে বেশি নিখুঁত তথ্য পাওয়া যায় না। ঠিক কবে তিনি রাজত্ব করতেন সেটিও অস্পষ্ট। বিভিন্ন শিলালিপি থেকে আমরা জানতে পারি আনুমানিক ২৭৩ থেকে ২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ তিনি রাজত্ব করতেন। সম্রাট অশোক কে এককথায় ভারতের শ্রেষ্ঠ রাজা হিসাবে ধরা হয়। হয়তো আলেজান্ডার , নেপোলিয়ান এদের থেকে সম্রাট অশোক এর কৃতিত্ব অনেক কম। কিন্তু ভারতের কাছে সম্রাট অশোক এর কৃতিত্ব অনেক এবং বিস্তৃত।ইতিহাস অনুযায়ী সম্রাট অশোক এর একশত ছেলের মধ্যে একজন হলেন সম্রাট অশোক। তিনি সম্রাট হবার আগে তক্ষশীলা ও উজ্জনী তে রাজপ্রতিনিধি ছিলেন। সম্রাট বিন্দুসার এর মৃত্যুর পর তার ছেলেদের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে অনেক সম্যসা ও ঝামেলা শুরু হয়। ইতিহাস বলে , বিন্দুসার এর মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলেদের মধ্যে অনেক ভ্রাতৃবিরোধ দেখা যায়। কথিত আছে , অশোক এর বারো ভাই অভিষিক্ত যুবরাজ সুমন কে ও হত্যা করে ও পরাজিত করেন। তারপর সম্রাট হিসাবে অশোক উন্নীত হন। তাই অশোক এর অভিষেক তার পিত বিন্দুসার এর চার বছর পরে হয়েছিলো। সম্রাট অশোক এর ব্যাক্তিগত জীবনের সেরকম কোনো বিস্তৃত বিবরণ পথ যায়নি। তাই অশোক এর ব্যাক্তিগত জীবন অন্ধকারে থেকে যায়।  বিভিন্ন শিলালিপি থেকে জানা যায় , তার প্রধান মহিষী ছিলেন অসিদ্ধমিত্রা , কারুবাকি , চারুবাকি , দেবী , পদ্মাবতী  ও তিসরক্ষিতা এই ছয়জন। শিলালিপি অনুযায়ী , তাঁর ছেলেরা ছিলেন - মহেন্দ্র , তিবার , কুনাল ও জনৌক। যদিও এইসব তথ্য যথেষ্ট প্রমান নেই ও একশো ভাগ সত্যি নাও হতে পারে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গণ বিভিন্ন মতামত দিয়ে গেছেন। একটি শিলালিপি তে উল্লেখ আছে অশোক এর মৃত্যুর পর তাঁর দুই পুত্র দশরথ ও সম্প্রতি তাঁর রাজত্ব ভাগ করে নিয়েছিলো। বিভিন্ন জায়গা থেকে অশোক এর প্রায় চল্লিশ টি শিলালিপি পাওয়া গেছে। সেগুলি থেকে ও প্রমান পাওয়া যায় যে তিনি তাঁর  ভাইদের হত্যা করেননি। 

আরো বিভিন্ন শিলালিপি থেকে অনেক কথা জানা যায়। জানা যায় তাঁর রাজত্ব কাল সম্পর্কে। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্রাট অশোক যে রাজত্ব পান তার বিস্তার উত্তর পশ্চিমে হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে বাংলার কিছুটা ও হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে পান্নার যদি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। কলিঙ্গ তাঁর অধীন ছিলো না। তাই সম্রাট অশোক কলিগ জয় করার জন্য উদ্দত হন। অশোক রাজা হবার আট বছর পর কলিঙ্গ জয় করেন। অশোক এর কলিঙ্গ যুদ্ধে ১ লক্ষ লোক নিহত হন ও দেড় লক্ষ লোক আহত হন। সম্রাট অশোক রণচন্ডি রুপি হয়ে যুদ্ধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ান। চারিদিকে মহামারী শুরু হয়ে যায়।শুরু হয় দুর্ভিক্ষ , দারিদরিদ্রতা শুরু হয়।  কথিত আছে যে যুদ্ধের এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে সম্রাট অশোক ব্যাপক ভাবে হতাশ ও দুঃখ পান। তাঁর মধ্যে যুধাং দেহি মানসিকতার অবসান হয়। সম্রাট অশোক গভীর অনুশোচনা শুরু করেন। সম্ভবত উপগুপ্ত নাম এক বৌদ্ধ ভিক্ষুক এর কাছে থেকে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। যোদ্ধা অশোক পরিণত হন ধার্মিক অশোক এ। কলিঙ্গ জয় করার পর তিরিশ বছর রাজত্ব কালে আর কোনো যুদ্ধ করেননি। এমন কি তার পরবর্তী উত্তরসূরি দেড় ও তিনি যুদ্ধই না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

ধার্মিক অশোক ধর্মপ্রচার ও করেছিলেন। ধর্ম প্রচার এর জন্য তিনি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধর্ম প্রচারক পাঠিয়েছিলেন। তাঁর ধর্মের বার্তা প্রচারের জন্য ধর্ম প্রচারক রা গিয়েছিলেন দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন রাজ্যে যেমন - চল , পাণ্ড্য , সত্ত্যপুত্র , কেরোলপুত্র রাজ্যে।  এছাড়াও গিয়েছিলেন ব্রম্ভপুত্র , সিরিয়া ইত্যাদি দেশেও। সম্রাট অশোক তাঁর মেয়ে সংঘমিত্রা ও ছেলে মহেন্দ্র কে সিংহল এ পাঠিয়ে ছিলেন। রাজকর্মচারী দের উপর ও আদেশ ছিলো ধর্ম কে প্রচার করার, শান্তির বাণী সর্বত্র ছড়িয়ে দেবার। বিভিন্ন শিলালিপি থেকে জানা যায় , যখন বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন মতের অমিল হতো তখন তিনি , সবাই কে একজায়গায় ডেকে ধর্মীয় সভা ডেকে ঐক্য আনার চেষ্টা করতেন। প্রাণী হত্যা নিয়ে তিনি অনেক সচেষ্ট হয়েছিলেন। সব প্রজাদের তিনি নিজের সন্তান দের মতো মানুষ করতেন। 

সম্রাট অশোক এর বিভিন্ন শিলালিপি পাওয়া গেছে আফগানিস্তান , কাবুল , কান্দাহার , জালালাবাদ , মনসেরা , সাহাবাজগাড়ি , দেরাদুন এর কাশ্মি প্রভৃতি স্থানে। তাঁর  সময় সারা দেশে প্রায় ৮৪০০০ বৌদ্ধ স্তুপ স্থাপিত হয়েছিলো। যদিও সংস্কার এর অভাবে বেশির ভাগে ই নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে মধ্যে প্রদেশ এর রাইসেন জেলা তে সাঁচি সস্তূপটি তাঁর এ স্থাপত্যের পরিচয়। বর্তমানে সরকারি উদ্যোগ এ অনেক স্থাপত্যের সংস্কার হয়েছে। 

No comments:

Post a Comment